ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা ২৫ হাজার মানুষের মানবেতর জীবন

মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন, মহেশখালী ::  মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। জাইকার অর্থায়নে ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের ফলে স্লুইসগেট ও প্রাকৃতিক পানি নিস্কাশনের সবগুলো পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। রাস্তাঘাটও পানির নিচে চলে যায়, বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। ফলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বছর বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতার কারণে ২ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, ছাত্রছাত্রীদের বহনকারী নৌকাডুবিতে ছয়জন আহত হয়। ৩ শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হয়। ব্যাহত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া। এ বছরও একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে ।
গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানের টোকিও থেকে জাইকার পরিচালক (বাংলাদেশ) তাকাশিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মাতারবাড়ী পরিদর্শন করে। স্থানীয় মানুষের কষ্টের কথা শুনেছে জাইকরা প্রতিনিধি দল। সরেজমিন সাধারণ মানুষের অবস্থা দেখতে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সুষ্ট ভাবে বসবাস করতে দ্রুত স্লুইস গইেট করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধিও কোন প্রকার স্লুইস গেইটের ব্যবস্থা না করায় এ বছরও পানিবন্ধি হয়ে পড়ছে হতভাগ্য মাতারবাড়ীর মানুষ।
ওই সময় জাইকার পরিচালক (বাংলাদেশ) তাকাসিয়া বলেছিলেন, ‘আমরা মাতারবাড়ীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছি। এখানকার মানুষের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। জাপানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বাংলাদেশ থেকে একটি এনজিও অভিযোগ করেছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধের কারণে প্রকল্পের আশপাশের জনগোষ্ঠী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ সরেজমিন দেখতে, চেয়ারম্যান ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আপনারা এ ব্যাপারে যা বলবেন তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। কিন্তু আজও তার কথার বাস্তবায়ন দেখতে যায়নি।
ওই সময় মাতারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ ও মাতারবাড়ীর আওয়ামী লীগ সভাপতি ছমি উদ্দিন এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর লোকজন মাতারবাড়ীর জনগণের ক্ষতির বিষয়টি তুরে ধরেন।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হায়দার তার ফেসবুক পেইজে ক্ষোভ প্রকাশ করে কোল পাওয়ার কতৃপক্ষকে ইঙ্গিত করে লিখেন (হুবুহু) “মাতারবাড়িতে বর্ষা শুরু হতে না হতেই চরম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিগত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে মাতারবাড়ির মানুষ। আমাদের ব্যবহৃত স্লুইসগেট গুলো আপনাদের অধিগ্রহণের কারণে ইতিমধ্য সম্পুর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করেই স্লুইসগেট গুলো আপনারা বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা কি ন্যায়সঙ্গত? নাকি আমাদের ভদ্রতাকে আপনারা দূর্বলতা মনে করতেছেন?গত বছর বর্ষার সময় আমাদের দাবীর প্রেক্ষিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য মাত্র দুটি পুল বসিয়েছেন যা অত্যন্ত অপ্রতুল। আরও তিনটি পুল বসানোর কথা থাকলেও তা এখনো কাজই শুরু করেননি। বেশীকিছু বলতে চাইনা আগামী এক সাপ্তাহের মধ্যে যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে না দেন তাহলে আমাদের ভদ্রতাকে যারা দূর্বলতা মনে করছেন জনগণকে সাথে নিয়েই আপনাদের সমুচিত জবাব দেব। মনে রাখবেন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যতটুকু করতে হয় তার সবটুকু করব। কারণ – আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদউল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি মাতারবাড়ীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ কাজ শুরুর ফলে পানি নিস্কাশনের স্লুইসগেট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যায় পানি নিস্কাশনের অন্য পথগুলোও। এতে তিন বছর ধরে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। ফলে মৌসুমি বৃষ্টির পানিতেও মাতাবাড়ীতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ২৫হাজার মানুষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ইতিমধ্যে মাতারবাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: