ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রকৃত সাফারিতে রূপান্তরের প্রথম ধাপের কাজ শেষ চলতি মাসে 

বন্যপ্রাণী থাকবে উন্মুক্ত, দর্শনার্থী সুরক্ষিত, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  সাফারি মানে কোনো দেয়াল বা বেড়া থাকবে না। প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশগতভাবে গাছপালা, ঝোপ-জঙ্গল, লতাগুল্মসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে থাকবে ভরপুর। দেখলে বোঝা যাবে বনের পরিবেশ। আর সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণীরা অবাধে বিচরণ করে। পর্যটক-দর্শনার্থীরা খাঁচায় বন্দি থেকে বিচরণকৃত বন্যপ্রাণীকে কাছ থেকে দেখে। তবে গাজীপুর ও চকরিয়ার সাফারি পার্কের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে ‘নামেই সাফারি পার্ক’। আন্তর্জাতিক মানের সাফারিতে রূপান্তরের জন্য মাস্টার প্ল্যানের আওতায় উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের ৩১টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। ২৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান এসব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। বাকি কাজ শেষ হলে ভিন্নরূপে দৃশ্যমান হবে এই পার্ক। চলতি মাসে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।

প্রথম ধাপে ৩১ প্যাকেজে চলমান কাজগুলো হলো বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য চত্বর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ডরমেটরি মেরামত, কালভার্ট নির্মাণ, বন্যপ্রাণীর বেষ্টনীর আড়াই কিলোমিটার কার্পেটিং কানেক্টিং সড়ক, এইচবিবি-মেকাডম-কার্পেটিং দ্বারা তৃণভোজী বেষ্টনীর অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ ও পুরনো ৪ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন, ভূমি উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন ফটক (মূল গেট) নির্মাণ, ফুটপাত নির্মাণ, টিকেট কাউন্টার ও দর্শনার্থী অপেক্ষাকক্ষ নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং, প্রবেশ-বাহির হওয়ার সড়ক নির্মাণ, বাঘ-সিংহ সাফারিতে প্রবেশ-বাহির হতে স্বয়ংক্রিয় ফটক নির্মাণ, চিলড্রেন এমিউজিং পার্ক নির্মাণ (ফিডিংসহ), বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য আধুনিক মানের ১৭টি বেষ্টনী নির্মাণ, কুমিরের আবাসস্থল উন্নয়ন, জলজ পাখির বেষ্টনীর জলাশয়ে পানির প্রবাহ উন্নয়ন-সম্প্রসারণ, দৃষ্টিনন্দন লেক নির্মাণ (কালভার্ট, স্লুইচ গেট, ড্রেনসহ), তিন কিলোমিটারের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, সাফারি পার্কের দক্ষিণাংশে ১ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য রেস্টিং শেড নির্মাণ, পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য ৬০ ফুট উচ্চতার পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ৩০ ফুট উচ্চতার পরিদর্শন টাওয়ার নির্মাণ; বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী সাফারির অভ্যন্তরে তিন মিটার প্রস্থের ৫ কিলোমিটার সার্ভিস রোড নির্মাণ।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের পাশাপাশি এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির লতা-গুল্ম-ঘাসের আবাদ করা হয়েছে, যাতে পার্কের বিচরণরত বন্যপ্রাণীরা স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার খেতে পারে।

পার্ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে. সাফারি পার্কের উন্নয়ন-সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশও ফিরে এসেছে। ফুটে উঠতে শুরু করেছে সাফারি পার্কের মূল বৈশিষ্ট্য।

পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছেন, দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর সঙ্গে আসা শিশু-কিশোরা ধারণা পাবে দেশে কত প্রকার বন রয়েছে। পার্কের অভ্যন্তরে এবং বাইরে পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হবে লেকের কাছে স্থাপন করা চিলড্রেন শেড। এখানে বাংলাদেশের তিন প্রজাতির বন শালবন, ম্যানগ্রোভ বন ও সংরক্ষিত (হিল) বনের ধারণা পারে নতুন প্রজন্ম।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাস্টার প্ল্যানের আওতায় চলমান ৩১টি প্যাকেজের কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত করতে পার্ক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কনসাল্টিং ফার্মের ৫ জন প্রকৌশলী মাঠপর্যায়ে তৎপর রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে সাফারি পার্ক গড়ে উঠেছে সেভাবেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঘন জঙ্গল, পরিবেশ-প্রতিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত এই পার্ককেও মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে চলমান ৩১টি প্যাকেজের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে চলতি জুনের মধ্যেই। এতে পার্কের পুরনো চেহারা পাল্টে যাবে। আগামী অর্থবছরেও উন্নয়নমূলক আরো কিছু কাজ করা হবে। এরপর আন্তর্জাতিক মানের শতভাগ প্রকৃত সাফারিতে রূপান্তরিত হবে এই পার্ক। এখানে বন্যপ্রাণী থাকবে উন্মুক্ত আর দর্শনার্থী থাকবে সুরক্ষিত।

সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত এই পার্কটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকৃত সাফারিতে রূপান্তরে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হলে অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হবে এই পার্ক।

পাঠকের মতামত: