ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় প্যারাবন উজাড়ের পর খালে বাঁধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে চিংড়িঘের, উপকূলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::   কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে এবার শতাধিক একর জায়গার প্যারাবন উজাড় করে এবং প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়িঘের। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র প্রায় ১৫দিন ধরে সেখানে নির্বিচারে প্যারাবন উজাড় করে জায়গার আয়তন বাড়ায়। এরপর এস্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে খালের দুইপাশে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে।

প্রভাবশালী দখলবাজ চক্রটি এখন উপজেলার বদরখালী মৌজার অধীনে বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ৩ নম্বর ব্লক গোলদিয়া ঘের এলাকার মারমেইড প্রকল্পের পাশের অন্তত একশ একর প্যারাবন উজাড় করে উল্লেখিত জায়গা দখলে নিয়েছে। অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এবং তাদের সঙ্গে বেশ কিছু পেশাদার ডাকাত প্রকৃতির লোক দখলকাজে জড়িত থাকায় জায়গার মালিকপক্ষ বদরখালী সমিতির সংশ্লিষ্টরা তাতে বাধা দিতে সাহস পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ তুলেছেন সমিতির একাধিক সভ্য।

বদরখালী সমিতির একাধিক সভ্য জানান, ২০০৭ সালের দিকে স্থানীয় অপর একটি চক্র বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ৩ নম্বর ব্লক গোলদিয়া ঘের এলাকার মারমেইড প্রকল্পের পাশের উল্লেখিত প্যারাবন দখলে নিয়ে চিংড়িঘের তৈরীর তোড়জোড় শুরু করেন। ওই সময় মারমেইড প্রকল্পের পাশের প্রবহমান খালটি জবরদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় উপকূলীয় জনপদে পরিবেশগত সংকটাপন্ন অবস্থা হতে পারে এমন অভিযোগ তুলে সমিতির সাবেক সম্পাদক দেলোয়ার হোছাইন বাদি হয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ১৩৩ ধারায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

সমিতির সংশ্লিষ্টরা জানান, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম তাৎক্ষণিক বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ৩ নম্বর ব্লক গোলদিয়া ঘের এলাকার মারমেইড প্রকল্পের পাশের ওই প্যারাবন রক্ষায় জবরদখলকারীদের বিপক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপর থানার ওসির নির্দেশনার আলোকে বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জবরদখল চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেন। ওইসময় পুলিশ দখলকারীদের সকল স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেন।

সমিতির সভ্যরা দাবি করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির ত্বরিত হস্তক্ষেপে ২০০৭ সালে দখল কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও প্রায় ১২বছর পর বর্তমানে ওই এলাকার প্যারাবন নিধনে ফের চিংড়িঘের তৈরীতে নেমেছে নতুন একটি প্রভাবশালী চক্র। বর্তমানে চক্রটি উপজেলার বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ৩ নম্বর ব্লক গোলদিয়া ঘের এলাকার মারমেইড প্রকল্পের পাশের অন্তত একশ একর প্যারাবন উজাড় করে উল্লেখিত জায়গা দখলে নিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত প্রভাবশালী দখলবাজ চক্রটি প্রায় ১৫দিন ধরে সেখানে নির্বিচারে প্যারাবন কেটে জায়গার আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি এস্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে খালের দুইপাশে বাঁধা দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। এ অবস্থার কারণে উপকূলীয় জনপদের ইউনিয়ন বদরখালীসহ চারপাশের এলাকা গুলোতে পরিবেশগত সংকট তৈরীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বদরখালী সমিতির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির এক নেতা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ৩ নম্বর ব্লক গোলদিয়া ঘের এলাকার মারমেইড প্রকল্পের পাশের প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের তৈরী করার জায়গাটি সমিতির মালিকানাধীন। অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং তাদের সঙ্গে এলাকার দাগী কিছু ডাকাত-সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক জড়িত আছে। সেই কারণে আমরা অনেকটা প্রাণের ভয়ে দখল চেষ্টায় প্রতিরোধ করতে সাহস পাচ্ছিনা। তবে প্রশাসন সহযোগিতা করলে আমরা এগিয়ে আসতে পারবো।

বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণ ও এস্কেভেটর দিয়ে খাল থেকে মাটি তুলে খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করার ঘটনাটি সত্য। তবে এ ঘটনায় কারা জড়িত সেই ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে আমি ঘটনাস্থলে উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) পাঠাবো। তদন্তে সত্যতা পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে চলাচল খালটি যাতে উম্মুক্ত থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: