শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজারের পেকুয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নির্ভর সেবাদানে ইতোমধ্যে প্রশংসা রাখছেন থানা পুলিশ। এতে করে থানা পুলিশের চলমান ভুমিকায় সন্তুষ্ট সাধারণ মানূষ। ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়ার নের্তৃত্বে থানা পুলিশের সার্বিক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতার ভুয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানূষ।
স্থানীয় অধিবাসিরা বলেন, বর্তমানে থানায় আগের মতো কোন টাউট, বাটপার বা দালালের দৌরাত্ম নেই। প্রতারক লোকজনের সংস্পর্ষ ছাড়াই আইনী সহায়তা প্রত্যাশি মানূষ ওসি’র সাথে সরাসরী দেখা করে সমস্যা সমাধান পাচ্ছেন। আর অনেকে ওসি’কে ভাগেও থানা পুলিশকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহারে ব্যর্থ হয়ে লাগামহীন মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রে মেতেছেন বলেও মন্তব্য করেন এলাকাবাসি।
এলাকাবাসি আরো জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় সকল ইউএনও ওসি আর প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ অফিসার কর্মচারীদের জড়িয়ে লাগামহীন অপবাদের তকমা লাগিয়ে বদলি করে দেয়ার একটি রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়।
জানা যায়, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজীর লাশ উদ্ধার ও মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের উর্ধ্বতন মহল থানার তৎকালীন ও.সি মোঃ আবদুর রকিবকে বদলী করে তার স্থলে বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়াকে নিয়োগ দেন। ২০১৫সালের ৩রা নভেম্বর কর্মস্থলে যোগদান করেই নবাগত ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের জন্মগ্রাম ও বিএনপি-জামাতের দূর্বেধ্য দূর্গ হিসাবে পরিচিত পেকুয়ায় জনজিবনের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা অব্যাহতের পাশাপাশি থানা কম্পাউন্ডকে দালাল, টাউট, বাটপাড়, ফড়িয়া ও অপরাধীদের দৌরাত্ম মুক্ত রাখতে ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
একই সাথে উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় পুলিশের অব্যাহত নজরদারী ও টহলাভিযান জোরদার করে সাধারণ মানূষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেন। এছাড়া যে কোন ধরনের ঘটনায় স্বয়ং নিজে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন তদন্ত সহ কমিউনিটিং পুলিশিং কার্যক্রম ও পাবলিক পুলিশের সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তৃণমূল জনগোষ্টির মাঝে থানা পুলিশ এবং আইনগত সেবা সূযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন।
এতে করে ওসি বা থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানূষদের কথিত নেতা ও টাউট, বাটপার দালালদের শোষণ, হয়রানী, ধান্ধাবাজি বা স্বীয় স্বার্থলিপ্সা চরিতার্থের পাঁয়তারার পথ সংকুচিত করে দেন ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া।
থানা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ওসি কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানী, ভুমিদূস্যতা, অপহরন, মুক্তিপণ আদায়, বনদূস্যতা, ইভটিজিং, বাল্য বিয়ে, নারী শিশু নির্যাতন, মানব পাচার, মাদকের আগ্রাসণ প্রতিরোধ, রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে শুরু করে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিমান মাদক, অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেফতার তামিলে সাফল্য দেখিয়েছেন।
ইতোপূর্বে নাশকতা মামলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মুন্সিমুরা এলাকার মৃত ওবায়দুল হাকিমের ছেলে যুবদল ক্যাডার নেছার উদ্দিন, মগনামা লালমিয়া পাড়া এলাকার ছৈয়দ আহমদের ছেলে বেলাল উদ্দিন(৪৮), মগনামা বাজার এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন, সদরের সরকারীঘোনা এলাকার মৃত শাহ আলমের ছেলে নবীর হোসেন, দক্ষিণ মেহেরনামা এলাকার মৃত হাজ¦ী হোছন আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম ভুট্ট্রো, সিকদার পাড়া এলাকার সামশুল আলমের পুত্র যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম বিটু, সরকারীঘোনা এলাকার মৃত খুইল্লে মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম, মিয়ারপাড়া এলাকার আকবর আহমদের ছেলে আবুল হোছন, সিকদার পাড়া এলাকার মৃত ইছহাকের ছেলে মোসলেহউদ্দিন, মৃত দেলোয়ার মিয়ার ছেলে শ্রমিকদল নেতা মুজিবুল হক চৌধুরী প্রকাশ ল্যাং মুজিব, বারবাকিয়ার পাহাড়িয়াখালী এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে মোঃ সেলিম ও সর্বশেষ তেলিয়াকাটা এলাকার মরহুম তোফায়েল আহমদের ছেলে বিএনপি নেতা মোঃ আবু তাহের প্রকাশ মনু মেম্বারকে গ্রেপ্তার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। একই সময়ে তিনি সিআইডি’তে তদন্তাধীন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ.ক.ম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত একাধিক আসামীকে ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেন।
থানা প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা গেছে যে, বর্তমান ওসি’র দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি ডাকাত সর্দ্দার, দূধর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে গেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছে, রাজাখালীর আলোচিত দূধর্ষ সন্ত্রাসী ও ডাকাত মোঃ আরমান প্রকাশ আলিম্যা ডাকাত, টইটংয়ের সেলিম ডাকাত, শিলখালীর পাহাড়ি এলাকার বহুল আলোচিত বদাইয়া ডাকাত, ডাকাত নুরুজ্জামানসহ আরো প্রায় ডজনাধিক ডাকাত। এলাকার চিহ্নিত একাধিক ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার ও এলাকাছাড়া করে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলকে এ ওসি করেছেন ছিনতাই মুক্ত জনপদ। উপজেলার মাদক আখড়াগুলো গুড়িয়ে দিয়ে তার সাথে সম্পৃক্তদের গ্রেপ্তার, দফায় দফায় বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্ধার সহ প্রায় ডজনাধিক মামলা রুজুর মাধ্যমে কর্ম এলাকার লোক সমাজকে এ ওসি করেছেন মাদকের অভিশাপমুক্ত। পৃথক পৃথক অভিযানে উদ্ধার হয়েছে প্রায় হাফ ডজনেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্রও গুলি। যেসব ঘটনায় মামলা রুজু ও তার সাথে সংশ্লিষ্টদেরও গ্রেপ্তার করে হাজতে প্রেরনের পারদর্শীতা দেখিয়েছেন ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া।
এছাড়া, বর্তমান ওসি’র কর্মকালীন সময়ে প্রায় অর্ধ সহ¯্রাধিক জিআর ও সিআর মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল সহ শতশত নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেপ্তার হয়ে হাজত বাসে গেছেন। বর্তমানে পেকুয়া থানাকে ঘুষের আখড়া বলে অপবাদ মিথ্যাচার করা হলেও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানূষের অভিমত তার উল্টো।
এ প্রসঙ্গে, গত এক সপ্তাহ ধরে থানায় আগন্তুক আইনী সহায়তা প্রত্যাশি প্রায় অর্ধশত লোকজন জানান, অভিযোগ এজাহার দরখাস্ত জিডি নিয়ে থানায় গিয়ে ওসি’র সাক্ষাতে তাদের আবেদনের সুরাহায় কোন ধরনের টাকা পয়সা বা সুযোগ সুবিধা নেয়নি ওসি।
উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়ন ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে তাদের গ্রামে অপরাধ প্রবনতা বিদ্যমান থাকলেও পেকুয়া থানার বর্তমান ও.সি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া দায়িত্ব পালনকালে এলাকায় অপরাধ ঝুঁকি কমে গেছে। টইটং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ইতিপূর্বে তাদের এলাকাটি সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে পরিচিতি পেলেও বর্তমান ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া পেকুয়া থানায় যোগদানের পর থেকে পরিবর্তন হয়েছে সে অবস্থার।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের লোকজন জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় আগে অপরাধ প্রবণতা নিত্য হলেও বর্তমান ও.সি যোগদানের পর অভুতপূর্ব উন্নতি হয়েছে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির। শিলখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের শতশত লোকজন জানিয়েছেন, বর্তমান ও.সি যোগদানের আগে তাদের এলাকাটি ছিল সব চাইতে বেশি অপরাধ প্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। হাজিরঘোনা, শিলখালী সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়, পেন্ডির ব্রিজ, এতিমখানা, মাঝেরঘোনাসহ বেশ কিছু চিহ্নিত পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব আর রাতের বেলায় পাহাড়ি লোকালয়ে অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম, জায়গা জমির দখল বেদখল, প্রতিপক্ষের লোকজনদের জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানী শোষনের ঘটনা থাকলেও বর্তমান ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া সেখানকার সর্বস্তরের লোকজনের দৌড়গোড়ায় গিয়ে মানূষকে আইনের প্রতি সচেতন ও দিন দিন অপরাধ বিমুখ করে তোলায় এখন পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।
পেকুয়া সদরের বিভিন্ন পয়েন্টের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে সালাহউদ্দিন ব্রীজ থেকে কাটাফাঁড়ি ব্রীজ পর্যন্ত এলাকায় ছিনতাই, যানজট, দখল বেদখল চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন ধরনের অসহনীয় অপরাধের ঘটনা সংঘঠিত হতে দেখা যেতো একই সাথে ও.সি বা থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে নিরহ লোকজনদের নানাভাবে শোষন নির্যাতন হয়রানীর মতো ঘটনা অহরহ দেখা গেলেও বর্তমান ওসি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়ার কর্তব্য কালীন সময়ে খুব কমই মিলে সে চিত্রের দেখা।
উজানটিয়া ও মগনামা এলাকার শত শত মানূষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিগত সময়ে তাদের এলাকার নিরহ লোকজনদের যে হারে থানা পুলিশে নিয়ে শোষন হয়রানী প্রতিষ্টা করায় বর্তমান ও.সি’ স্বার্থান্বেষী মহলের বিরাগভাজনে পরিণত হয়েছেন। ফলে, ও.সি ও থানা পুলিশকে ব্যবহার করে ধান্ধাবাজি ও ফাঁয়দা লিপ্সা চরিতার্থে জড়িতরা বর্তমান ও.সি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়াকে বিষপোঁড়া মনে করে লাগামহীন মিথ্যাচার ও বদলীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন মন্তব্য করে অধিকাংশ লোকজন জানিয়েছেন, বর্তমান ওসি’র শাসনামলেই তারা মোটামুটি অনেক নিরাপদ ও ভাল আছেন। আর এতে তারা মহাখুশি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, পেকুয়া থানার বর্তমান ও.সি জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুঁইয়া এখানকার কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে থানায় আগন্তুক দর্শনার্থী ও ভুক্তভুগীদের কোন নেতা বা দালালের সংস্পর্ষ না নিয়ে সরাসরি তার সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে আইনি সহায়তা গ্রহনের পরামর্শ দেন। এছাড়া উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনা ও প্রযুক্তি অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে পেকুয়া থানা পুলিশের কার্যক্রমে নতুনত্ব এনে সরাসরী পুলিশের সেবা দেওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মন্তব্য, গত ইউপি নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে এলাকায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারক নেতৃস্থানীয়রা প্রতিদ্বন্ধী প্রতিপক্ষের কাছে ম্যানেজ, বশ বুক বেচাকেনা হয়ে সাত ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের চরম ভরাডুবি ঘটানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশের কৌশলি তৎপরতায় নৌকা মার্কার সন্তোষজনক জয় লাভ করতে সক্ষম হয়।
পাঠকের মতামত: