ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় আনন্দ স্কুলের টিসি’র বিরুদ্ধে শিক্ষা উপকরণ বিতরনে দূর্নীতির ও সরকারী অর্থ লোপাটের অভিযোগ

durnitiমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের অধীনে কর্মরত টিসি (ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর) মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে আনন্দ স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরনে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও সরকারী অর্থ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর আনন্দ স্কুলগুলোর জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দের অর্থ থেকে বিপুল পরিমান সরকারী অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূর্নীতিবাজ টিসির বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারনে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার ১২৩ টি আনন্দ স্কুলের প্রায় তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে দুই শিক্ষা উপকরনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিজন শিক্ষার্থীতে ছয় মাস অন্তর অন্তর ৮০টাকা শিক্ষা উপকরণ খাতা ও কলম দেওয়া হয়। রস্ক প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট আনন্দ স্কুল পরিচালনা কমিটির নামে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে উসব উপকরনের চেক ইস্যু হয়। কিন্তু পেকুয়ায় কর্মরত আনন্দ স্কুলের টিসি মাসুম বিল্লাহ পেকুয়া উপজেলার সবকটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের এক প্রকার জিম্মি করেই শিক্ষা উপকরনের চেকসহ অন্যান্য চেকগুলো হাতিয়ে নেন। পরে নিজের ইচ্ছেমতো অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে টিসি মাসুম বিল্লাহ শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

জানা গেছে, চলতি মাসে শিক্ষা উপকরনের জন্য পেকুয়া উপজেলার ১২৩টি আনন্দ স্কুলের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ আসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। গত কয়েক দিন ধরে টিসি মাসুম বিল্লাহ ১২৩টি স্কুলের প্রায় ১১৫টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা উপকরনে চেক হাতিয়ে নিয়ে চকরিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে নিয়েছেন।

আনন্দ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, দূর্নীতিবাজ মাসুম বিল্লাহ পেকুয়া চৌমুহুনীর হালিমা লাইব্রেরীর মালিকের সাথে যোগসাজশ করে উপজেলার প্রায় ১১৫টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ওই লাইব্রেরী থেকে নিুমানের খাতা ও কলম বিতরণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১১৫টি আনন্দ স্কলের প্রায় দুই হাজার ৮’শ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য ৮০টাকা হারে শিক্ষা উপকরনের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া চৌমুহুনীর হালিমা লাইব্রেরী কাছ থেকে টিসি মাসুম বিল্লাহ মাত্র ৪০টাকা দিয়ে খাতা ও কলম ক্রয় করেছেন। আর টিসি বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে। ১১৫টি আনন্দ স্কুলের প্রায় দুই হাজার আটশত শিক্ষার্থীর জন্য সর্বমোট বরাদ্দ ২লাখ ২৪হাজার টাকা। নিুমানের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে টিসি মাসুম বিল্লাহ প্রায় ১লাখ ১২হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

আনন্দ স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানান, ইতিপূর্বেও আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের পোশাক ক্রয়েও বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল টিসি মাসুম বিল্লাহ। এ নিয়ে আনন্দ স্কুলের ঢাকাস্থ প্রকল্প পরিচালকের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা হেছে, আনন্দ স্কুলের টিসি মাসুম বিল্লাহ পেকুয়ায় জামায়াত-শিবিরকে প্রতি মাসে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। প্রতিনিয়তই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সাথে তার বিশেষ দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পেকুয়া উপজেলার মগনামা করলিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও দূর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার আবুল কাসেমের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড়ের কৃঞ্চচূড়া আনন্দ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন টিসি মাসুম বিল্লাহ। অথচ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আনন্দ স্কুলে কোন ধরনের শিক্ষক নিয়োগের সরকারী নিয়ম নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে টিসি মাসুম বিল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে কারো কাছে বাধ্য নই। এর পূর্বেও আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকেরা বহু লেখালেখি করেছে। এবারও আপনার লিখেন। আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখালেখি করে কেউ কিছুই করতে পারবেনা।

পাঠকের মতামত: