ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

দুয়ারে বৈশাখ ইলিশে উত্তাপ

1a87নুরুল আমিন হেলালী :::

আর দুইদিন পরই পহেলা বৈশাখ,বাঙ্গালীর প্রানের উচ্ছ্বাস বাংলা নববর্ষ। সারাদেশেই নতুন বছর বরণে চলছে নানা আয়োজন। বাঙালির প্রাণের এই আয়োজনে ”যুগ যুগ ধরে পান্তা ইলিশ হয়ে উঠেছে এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অনেক আয়েসি মানুষের কাছে বছরের প্রথম দিন পাতে ইলিশ না থাকলে যেন অপুর্ণ থেকে যায় সবকিছু।তাই এসময় ইলিশের চাহিদা থাকে বছরের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। বাজার ঘুরে দেখা যায়,অন্য সময়ের তুলনায় ১০ গুন বেশি দাম হাঁকছেন ক্রেতারা। বরাবরের মতো এবারও নববর্ষকে সামনে রেখে পর্যটন এলাকার প্রতিটি হোটেল-রেস্টোরেন্টে নানা রঙের নানা ঢংয়ের পিঠা পায়েস,নানা পদের ভর্তা,পান্তা ভাতের সাথে বিভিন্ন সাইজ ও বিভিন্ন স্বাদের ইলিশ রেসিপি থাকছেই। এক-দুই সপ্তাহ আগে থেকেই অনেক হোটেল-রেস্তোঁরা মালিক অতিথি আপ্যায়নে ইলিশ মাছ মজুদ করে রাখেন। দাম নাগালের বাইরে থাকায় অনেকেই নববর্ষ মৌসুমেও আগে থেকে মাছ সংগ্রহ করে রাখতে সাহস পাননি। ফলে নববর্ষ উপলক্ষে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। শহরের বড় বাজার,বাহারছড়া বাজার,কানাইয়ার বাজার,কালুর দোকান,কলাতলী বাজার,মাছের আড়ত খ্যাত ফিশারী ঘাটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাজারেই ক্রেতা চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ অনেক কম। যা পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারন ত্রেতাদের নাগালের বাইরে। মাছের আকার যাই হোক না কেন ইলিশ নাম নিলেই কেজিতে হাজারের অধিক গুনতে হবে। বড় বাজারে মাছ কিনতে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নুরুল কবির তিনি মাছের দামে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই ক্রেতাদের গলা কাটার তালে থাকে। ঈদ থেকে শুরু করে বৈশাখ কোন সময় ছাড় দেয় না। কোন কারণ ছাড়াই এক সপ্তাহে মাছের দাম বেড়েছে ১০ গুনের বেশি। তিনি আরও জানান, এক কেজির উপরে যদি কোন ইলিশের ওজন হয় তবে বিক্রেতারা ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে যাদের বেশি টাকা আছে তারাই ইলিশ মাছ খাবে। কম টাকার মানুষের ইলিম মাছ খেতে মানা। এ বিষয়ে দেখার কেউ নেই বললেই চলে। বাহারছড়া বাজারের আরেক ক্রেতা চাকুরিজীবি তারজিনা হক জনান, পরিবারের সদস্যদের বায়না পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাবে। বৈশাখের আগের দিন দাম বেশি হবে, তাছাড়া মাছ পাওয়াও মুশকিল। তাই তিন দিন আগেই মাছ কিনতে এসেছেন। তবে বাজারে এসই তার ধারনা পালটে গেছে বলে জানান। তিনি বলেন,বাজারে মাছও কম, আবার দামও বেশি। কেজিতে ৮০০ টাকায় জাটকা কিনেছেন। আরজিনা হকের মতো অনেকেই বড় ইলিশ কেনার স্বপ্ন নিয়ে বাজারে এসে ছোট ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন আবার যাদের আয় নিতান্তই কম তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ পহেলা বৈশাখ ঘিরে মুনাফা পকেটে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ইলিশের এ উচ্চ মূল্যের কারন জানতে চাইলে বড়বাজারের মাছ বিক্রেতা কাসেম জানান, পাইকারি বাজারে ইলিশের চাহিদা বাড়ায় খুচরা বাজারেও বেড়েছে। এদিকে ইলিশের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করেছে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৎস্য কর্মকর্তা। তাদের মতে শহরের বাজার গুলোতে ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাস যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন বাজারে ইলিশে যেন ছড়াচ্ছে উত্তাপ। ফলে অনেকের বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তার সাথে ইলিশ ভাজা খাওয়ার পুরনো খায়েস হয়তো অধরাই থেকে যাবে মনে করেন সাধারন মানুষ।

পাঠকের মতামত: