ঢাকা মতিঝিল পোস্ট অফিস হাই স্কুল হয়ে উঠেছিল একখন্ড রামুর প্রতিচ্ছবি। ঢাকায় অবস্থানরত রামুবাসী স্বপরিবারে উপভোগ করেছেন এ আয়োজনের প্রতিটি মুহুর্ত। চেনা-অচেনা প্রিয় মুখগুলিকে শত মাইল দূরে খুঁজে পেয়ে চিরচেনা আড্ডায় মেতেছিল ঢাকায় অবস্থিত রামুর বিভিন্ন পেশার লোকজন।
দিনের শুরুতেই বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে গত ২০ জানুয়ারি (শুক্রবার) বর্ণাঢ্য উদ্ভোধন করা হয় রামু উৎসবের। এরপর পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ থেকে পাঠের পর শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। দিনের প্রথম অধিবেশনে ছিল গুণীজন সম্মাননা, সম্মাননা স্নারক প্রদান, আলোচনা অনুষ্টান।
সকালের অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, ককবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বিচারপতি ও সাবেক মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান আমিরুল কবির চৌধুরী, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্নেল ফোরকান আহমদ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান, চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আজিজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
রামু সমিতির প্রতিষ্টাতা সভাপতি ফণীভূষণ শর্মার সভপতিত্বে এ অধিবেশনে সুচনা বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক নুর মোহাম্মদ। রামু সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমেন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে রামু সমিতির কার্যক্রম তুলে ধরেন।
শিক্ষা, সমাজসেবা ও সাহিত্য এই তিন ক্যাটাগরিতে তিনজন কে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে রামুতে অসামান্য অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাংসদ মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে। রামু সমিতির পক্ষে সম্মাননা প্রদান করেন সভাপতি ফণীভুষণ শর্মা ও গ্রহণ করেন তাঁর পুত্র সাইমুম সরওয়ার কমল এম পি।
সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয় উপসংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে। একুশে পদকপ্রাপ্ত পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের গত অর্ধশতাব্দির ও বেশি সময় ধরে সমাজ সেবায় নীরব ও বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে সম্মাননা প্রদান করেন মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।
সাহিত্যে ‘রামু’র জন্য নীরব অবদান রেখেছেন আবুল কাশেম। জন্মসূত্রে রামুর কেউ না হলেও রামুর হাজার বছরের অনুদ্ঘাটিত ইতিহাস বুদ্ধিমত্বার সঙ্গে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন তিনি। রচনা করেন “রামুর ইতিহাস” বইটি। রামু সমিতি এই ইতিহাসবিদ কে গুণীজন সম্মাননা জানায়। সম্মাননা প্রদান করেন চট্টগ্রাম সমিতির প্রাক্তন সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী।
এরপর ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা স্নারক প্রদান করা হয়। যারা নিজ নিজ কর্মগুণে ও দক্ষতায় নিজেদের সম্মানের আসনে বসিয়েছেন এবং রামুবাসীকে গর্বিত করেছেন। সম্মাননা স্নারক প্রাপ্তরা হলেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্নেল ফোরকান আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ। সম্মাননা স্নারক প্রদানে সার্বিক সহায়তা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সুজন শর্মা।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন – আজ আমি এক অন্য রামু দেখতে পাচ্ছি, এ রামু অসাম্প্রদায়িক, শান্তির রামু। ২০১২ সালে অনুষ্টিত সহিংসতাকে সামান্য ক্ষত উল্লেখ করে তিনি বলেন- এ সামান্য ক্ষতকে ভুলে হাজার বছরের পুরনো এই অঞ্ছলের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী পারস্পরিক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপিত হয়েছে।
মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম ও সুপর্ণা বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সব আলোচকই রামুর ঐতিহ্য ও পারস্পরিক সম্প্রীতিকে তুলে ধরেন। মেজবান দিয়ে মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেলে চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে জনপ্রিয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করে করে পুরো আয়োজননে মাতিয়ে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া।
পাঠকের মতামত: