মফিজুর রহমান:: কক্সবাজার এক সময় একটি পূর্ণ নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেশে বিদেশে সমাদৃত ছিল।প্রকৃতি তার আপন নিয়মে নিজেকে পরিবর্তন করতো।ঋতু শ্রবন যেন দৃশ্যমান এই জনপদে…
আমরা সব হারিয়েছি। প্রকৃতি, জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ সবকিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেল একে একে। বৈশ্বিক উষ্ণতা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি যতটা না দায়ী, তার চাইতে নিজে, পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আরো বেশী দায়ী।
কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী গঠনের জন্য প্রথমে এরশাদ সরকারের আমলে সল্প মিয়াদী ও দীর্ঘ মিয়াদী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। পরবর্তী সরকারগুলো ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্যুত হয়ে ধরণ পরিবর্তন করে বর্তমান সরকারের মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
মূলতঃ ৯১ এর পর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা, সরকারী চাকুরীতে থাকা, কর্মের খুঁজে আসা বা পর্যটন ব্যবসায় উদ্যোগী হয়ে এই জেলাতে নিজে নিজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে।
সরকারের তেমন নিয়মনীতি ও নিবীড় পর্যবেক্ষণ ছিলনা বলেই যত্রতত্র অপরিকল্পিত অনেক ব্যবসা গড়ে তুলে।যা বর্তমানে নিয়মনীতিতে আনতে বিভিন্ন বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের আইনী বাধাসহ ভুলবুঝাবুঝি লেগেই আছে।
স্থানীয় জনসাধারণ, পর্যটক, চাকুরীজীবি, কর্মের খুঁজে আসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী মিলে এ যেন নাস্তানাবুত অবস্থা।
সাথে রোহিঙ্গা ও মানবতার কাজে নিয়োজিত এনজিও ও তাদের কর্মচারী, গাড়ি ব্যয়বহুল জাবনযাপন সবকিছু মিলে এই শহর এখন বিশ্ব দরবারে ব্যয়বহুল শহর।
পরিস্থিতি সাভাবিক হলে কেন আন্দোলন:
আপনারা জানেন, পুরো পৃথিবী মহা সংকটে দিন, ক্ষণ, সময় পার করছে।করোনা নামক জীবাণূ চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পরাস্ত করে দুনিয়াজুড়ে সকল ক্ষমতাধর ব্যক্তি, দেশ এখন আকাশের মালিকের দিকে থাকিয়ে আছে।কোন ভাবেই থামছেনা মৃত্যুর মিছিল।পরিবারে পরিবারে উৎকন্ঠা উদ্বেগ।
আপন মানুষগুলোর প্রচন্ড আবেগ, অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও কেউ জানি কারো নয়!
কিছু ডাক্তার চিকিৎসা দেবার ভয়ে পলাতক। আবার হ্নদয়ে স্পর্শ করা সেবায় নিয়োজিত বীর ডাক্তার-নার্স ও সাস্থ্যকর্মী যেন অসহায়..
পরাস্ত হওয়া দেশের পরিস্থিতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে সাধারণ ছুটি চলমান। যা দেশের অভ্যন্তরে সকল সরকারী বেসরকারী, আধাসরকারী স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পরিতাপের বিষয় হলো -রোহিঙ্গাদের মানব সেবায় নিয়োজিত ১৬০ টির অধিক এনজিও তাঁদের কর্মকান্ড সরকারী ঘোষণার সাথে পুরোপুরি সন্মান প্রদর্শন করে নি।
কিছু এনজিও যারা ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে, তাদের ঋণ আদায় প্রক্রিয়া চলমান।মানুষ কোয়ারেন্টাইনে থাকবে; না খাদ্য অনুসন্ধানে যাবে, না ঋণের দৌঁড়ানি খাবে!
কি করতে নিবন্ধিত?কি করছেন:
বাংলাদেশ গেজেট, অক্টোবর ১৩/২০১৬ বৈদেশীক অনুদান (সেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-১৬ অনুযায়ী সকল এনজিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অলাভজনক সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিস্কাশন, ত্রান ও পূনর্বাসন, কৃষি ও কৃষি উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনসচেতনা, দরিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র সুশাসন, মানবাধিকার, ধর্ম নিরেপেক্ষতা, প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়ন ও অধিকার সুরক্ষা, শিশু কিশোর কিশোরী, প্রবীন ও প্রতিবন্ধীদের অংশ গ্রহণ ও অধিকার রক্ষা,সম-অধিকার ও সম-অংশ গ্রহন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ, দক্ষতা উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক কার্যক্রম, সমাজ কল্যাণ, গবেষণা কার্যক্রম, বিভিন্ন জাতি সত্তা, ভূমি অধিকার রক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য যে কোন কার্যক্রম কর্মসূচী করার শর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর,এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন গ্রহন করে।
২০১৭ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত্ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রেকর্ড পরিমাণ হওয়ায় এনজিওদের প্রকল্প অনুমোদন ও বস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির জন্য বরাদ্ধের কথা বলা হয়।
১৬০টির অধিক এনজিও প্রতিদিন ৫০০০ গাড়ি নিয়ে বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পএ কাজ করার জন্য যাতায়াত করে।
কথা হলো,১৬০ এনজিওর মধ্যে অর্ধেকের অধিক রোহিঙ্গাদের সাস্থসেবা ৩০টির অধিক স্যানেটারী পয়ঃনিস্কাশন,প্রচার ও জনসচেতনা এবং বাকী অর্ধেক খাদ্য ও অন্যান্য কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে।দেশের চলমান এই সংকঠে অর্ধেক এনজিও যদি,মানবতার পাশে দাঁড়াতেন,আমার বিশ্বাস কর্মহীন অসহায় অসুস্থ মানুষের এত দুর্ভোগ হতোনা।
প্রশ্ন জাগে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের সেবাদানের জন্য কি হলফনামামূলে নিবন্ধন!
তাঁদের নিস্কৃয়তা আমাদের কি জানান দেয়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই-
এনজিও কর্মীদের আকাশ সমান বেতন, বিলাসবহুল জীবন, আমাদের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব পড়েছে।তাদের চলাফেরা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে। ইতোমধ্যে এই শহরকে পৃথিবীর ব্যয়বহুল শহর ঘোষণা করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা কষ্ট হলেও খাপ খেয়ে নিচ্ছি।
দয়া করে এই মহা সংকটে কক্সবাজারে অবস্থানরত সকল এনজিওদের বাধ্যতামূলেক খাদ্য, সাস্থ্য, স্যানিটেশন ও প্রচারণা (যাহা নিবন্ধন শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে)কর্মসূচীর আওতায় আনা হউক।
(কিছু কিছু এনজিও ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।
মফিজুর রহমান
সদস্য সচিব
কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টি
প্রধান সমন্বয়ক
কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন।
পাঠকের মতামত: