চবি সংবাদদাতা :: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হয়েছে ২০ জন। এর মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড থেকে আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনজনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়। চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইসিউতে স্থানান্তর করা ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- আমজাদ হোসেন সোহাগ, খলিলুর রহমান এবং অংসইনু মারমা। এছাড়া নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাইজুল ইসলাম, আবু সাইদ, সান আহমেদ, রাফসান ও আসলাম।
এর আগে, রাত থেকে এ ঘটনায় উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় তারা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি বক্সের ভেতরের চেয়ারগুলো রাস্তায় এনে জ্বালিয়ে দেন। রাত ১১টার দিকে উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরে গিয়ে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা।
পরিবহন দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নূরুল আবছার বলেন, ভেতরে থাকা সব গাড়িতেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অধিকাংশেরই কাচ, ফ্লাডলাইট ও বডিতে আঘাত করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভেতরে থাকা ২২টি বাস ও ১৬টি মাইক্রোবাস, একটি মোটরবাইক ও প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ট্রেন ক্যান্টেনমেন্ট স্টেশন অতিক্রম করার কিছু পর রেললাইনের ওপর হেলে পড়া একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৬ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পরিবহনের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষক ক্লাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রেলের বগিতে আগুন জ্বালানো হয়েছে, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার সাধারণ ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখানে নিশ্চয়ই জননেত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অ্যাজেন্ডা ছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে তারা।
তিনি আরও বলেন, যারা আহত হয়েছেন, আমরা তাদের জন্য দুঃখিত, মর্মাহত। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ছেলেমেয়েরা যাতে ছাদে না ওঠেন, সে জন্য রেলের বগি বাড়ানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।
চবিতে শাটলের ছাদের দুর্ঘটনার পর ভাঙচুরে তিন মামলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে উপাচার্যের বাংলো, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন ভাঙচুরের ঘটনায় ৩টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
তবে পুলিশ কিংবা প্রক্টর কেউই মামলার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় চবি উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মামলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন উপাচার্য নিজেই।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, “গতকাল গার্ডের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। সেখানে আমি থাকলে আমাকেও মেরে ফেলতে চাইত। ভাঙচুরের বিষয়ে তিনটি মামলা করা হয়েছে। ভিসি’র বাসভবনে ভাঙচুর, পরিবহন দফতরে ভাঙচুর, গার্ড বা ভিসি হত্যাচেষ্টায় ‘এটেম্ট টু মার্ডার কেস’ এই তিনটি বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে এগুলো নিশ্চিত করা হবে। আর আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়ে দায়িত্ব নিবে প্রশাসন। তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের বটতলী স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেনটি চৌধুরীহাট পার হওয়ার সময় ছাদে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীরা হেলে পড়া গাছের ডালের আঘাতে গুরুতর আহত হন। এসময় তাদের মাথা ফেটে যায়। এছাড়া কয়েকজন চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, আহতের সংখ্যা প্রায় ২০-এর অধিক। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাটল ট্রেনটি ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ বক্সের বেশকিছু চেয়ার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে তারা উপাচার্যের বাংলো, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দফতরে থাকা অন্তত ৬৫টি গাড়ি ভাঙচুর চালায়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেখছেন বলে জানান।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মামলা হলে ওসি বিষয়টি বলতে পারার কথা। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।” কিন্তু পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।
পাঠকের মতামত: