মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্টার ইমরান হাবিব যোগদানের পর থেকেই কার্যালয়টি নানা অনিয়ম, দূর্নীতির ও ঘুষের মহা-আঁখড়ায় রূপান্তরিত হয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ তুলেছেন। এ সরকারী অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না। ওপেন সিক্রেট ঘুষ বানিজ্যের কারবার চলে। জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রতিনিয়তই এখানে এসে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয় সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী, অফিসে নিযুক্ত কয়েকজন নকলবিশ ও কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারীদের। প্রতিনিয়তই জমির ক্রেতা বিক্রেতারাসহ দলিল রিখকরা এখানে হয়রানীর শিকার হলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তা বন্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। নানান অনিয়ম-দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যে দিন দিন চরমভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পেকুয়ার সাব রেজিষ্টার ইমরান হাবিব। স্থানীয় সচেতন মহল পেকুয়ার সাব রেজিষ্টার ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাবসহ সম্পদের খোঁজ নিতে দুদকের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর দলিল লিখক ও নকলবিশ পেকুয়ার সাব রেজিষ্টার অফিসের কতিপয় কর্মচারীদের সাথে আঁতাত করে জমির ক্রেতা ও দলিল লেখকদের কাছ থেকে প্রতি লাখে ৯% হারে মোটা অংকের কমিশন আদায় করেন। আর এসব কমিশন থেকে সাব-রেজিষ্টারকে ভাগ দেওয়া হয়। দলিল লিখকরা পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসের প্রধান সহকারী, বালাম লেখক বিকাশ ও জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে এসব ঘুষের টাকা আদায় করে বাগবাটোয়ারা করে নেন। ফলে এতো ঘুষ বানিজ্যের পরেও খোদ সাব-রেজিষ্টার নিশ্চুপ থাকেন এমনই অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। সাব রেজিষ্টার ইমরান হাবিবের বাড়ি কক্সবাজার। স্থানীয় জেলার বাসিন্দা ও কর্মস্থল একই জেলায় হওয়ার সুবাধে পেকুয়ায় বেশ দাপটের সাথে ওই সাব রেজিষ্টার নির্লজ্জ ঘুষ বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, প্রতি সপ্তাহের দুই দিন পেকুয়া সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ে দলিল সম্পাদনের কাজ চলে। এই সুবাধে এখানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় শতাধিক দলিল সম্পাদন করে থাকেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পেকুয়া চৌমুহুনীর বিভিন্ন দোকান ও ফুটপাতে দলিল লিখকরা অস্থায়ী কার্যালয় বসিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে এসে দলিলের কাজ চুড়ান্ত করেন। আর এখানেই দলিল লিখকরা সরকার নির্ধারিত দলিলের ফির সাথে সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ের জন্য মোটা অংকের কমিশন নেন। সাথে দলিল লিখার অজুহাতে দলিল লিখকরা জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করেন অতিরিক্ত অর্থ। এক শ্রেণীর দলিল লেখক পেকুয়া সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারীদের সাথে গোপনে আঁতাত করে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। আর পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই সনদবিহীন ভূঁয়া দলিল লিখকদের অপতৎপরতা বাড়ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়া সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ও কয়েকজন নকলবিশ পরিচয়ধারীরা প্রতিনিয়তই সাব-রেজিষ্টারের নাম ভাঙ্গিয়ে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। স্থানীয় কিছু মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী লোক পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিস থেকে থেকে মাসোয়ারা নিয়ে সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি মুখ বুঝে সহ্য করেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সরকারী নির্দিষ্ট ফি‘র বাইরে সাব-রেজিষ্টার কার্যালয়ে প্রতি লাখে কেন কমিশন দিতে হবে? আর এ অবৈধ কমিশন কী সরকারী কোষাগারে জমা হয়? নাকি সাব রেজিষ্টার কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের পেটে জমা হয়? স্থানীয়রা অবিলম্বে পেকুয়ার সাব-রেজিষ্টারের কার্যালয়ের ঘুষখোর সাব রেজিষ্টার ইমরান হাবিবসহ সকল ঘুষুখোর কর্মচারীদের প্রত্যাহার দাবী করেছেন এবং দুদকের নজরদারী বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে পেকুয়ার সাব-রেজিষ্টার ইমরান হাবিবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন ধরনের বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অপরদিকে পেকুয়া সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ে দুদুকের নজরদারী বাড়াতে এলাকার সুশীল সমাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার জেলা রেজিষ্টার রায়হান মন্ডল জানান, তিনি পেকুয়ার সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাঠকের মতামত: