ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ২৮ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার যাচ্ছেন। ওইদিন মেরিন ড্রাইভের উখিয়ার ইনানীতে আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া পরিদর্শন শেষে অংশ নেবেন সৈকতের লাবণী পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায়।

প্রধান অতিথি হিসেবে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার আগে কক্সবাজারে চলমান কর্মযজ্ঞের মাঝে সম্পন্ন হওয়া ২৮টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনায় ১০টি মেগা প্রকল্পসহ ছোট-বড় ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, লিংকরোড় থেকে হলিডে মোড় সড়ক এবং মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ডে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে জনগণ। চলমান প্রকল্প থেকে আরও ২৮টি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সমাপ্ত হওয়ায় এসব প্রকল্প ৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এক হাজার ৩৮২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমাপ্তের পর উদ্বোধনের তালিকায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামুতে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কক্সবাজারে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম উন্নয়ন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কুতুবদিয়ায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ও বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ এবং কলাতলী উদ্যান নির্মাণ।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতায় জোয়ারিনালা শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ও উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ৩ তলাবিশিষ্ট আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন নির্মাণ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ; টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ; রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্সবাজার টেকনাফস্থ শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সি-ডাইক অংশের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ণ। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলাধীন কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাকঁখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ; নবনির্মিত ৬ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন; রামু উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ; টেকনাফ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ; উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ; বিমানবন্দর হতে নুনিয়ারছড়া সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ; শহীদ সরণী সড়ক এবং ৩টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ; সদর থানা হতে খুররুকুল পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ; সুগন্ধা পয়েন্ট হতে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ এবং কক্সবাজার প্রধান সড়ক হতে খরুশকুল রোড হয়ে তারাবনিয়ারছড়া পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে।

পাশাপাশি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এলজিইডির আওতায় কুতুবদিয়ার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কের ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি ও আকবর বলি ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি ও মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নতির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর তীরের ৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮ পোল্ডার পুর্নমেরামত প্রকল্প।

কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফীন বলেন, উদ্বোধনের তালিকায় থাকা ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সওজ বিভাগের দৃষ্টিনন্দন সড়ক তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ মহাসড়কটি স্থানীয় জনসাধারণকে সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ লাঘব করেছে। লিংক-লাবণী মোড় সড়কটি পর্যটন নগরীর প্রবেশদ্বার। দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগমে মুখর এই সড়ক চারলেন করায় যাতায়াত ভোগান্তি কমেছে।

প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ এলাকার জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। সড়কের উভয় পাশে সড়কবাতিতে রাতেও ফুটপাত ধরে পর্যটকদের আনাগোনা পাল্টে দিয়েছে নগরীর দৃশ্যপট।

রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়কটি রামু সেনানিবাসের অবস্থানের কারণে সামরিক গুরুতপূর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি টেকনাফ-উখিয়া গমনে একমাত্র সহজতর মাধ্যম হওয়ায় সরকার সড়কটিকে ৩ দশমিক ৭০ মিটার থেকে ১০ দশমিক ৩০ মিটারে উন্নীত করেছে। প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পণ্যসমূহ এবং সাময়িক আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ক্যাম্পসমূহে পরিবহন সহজ হয়েছে। সড়কের দূরত্ব কমেছে ১২ কিলোমিটার, এমনটি দাবি চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমানের।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে গণপূর্ত বিভাগের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ১৩৫ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১০টি শেষ হয়েছে।

পাঠকের মতামত: