ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ১১৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে

নিজস্ব প্রতিবেদক ::করোনা ভাইরাসে প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীরা জানেনা তাদের করনীয় কি ? বেশির ভাগ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগিরা বুঝতে পারছেনা ঘরের মধ্যে তাদের কাজ কি। আবার অনেকে জেনেও পরিবারের সাথে থেকে প্রতিনিয়ত ভাঙছে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম। তাই দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে ধারনা করেন সচেতন মহল। তবে স্বাস্থ্য কর্মীদের দাবী প্রতিনিয়ত তাদের নিয়ম কানুন বিষয়ে ধারনা দেওয়া হলেও তারা তা পালন করছেনা আবার অনেকে সক্ষমতার অভাবে পালন করতে পারছেনা। এদিকে ২১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ১১৩ জন কে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন।

রামু উপজেলার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের সাথে মোবাইলে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ৯ দিন আগে এসেছে সৌদি আরব থেকে। প্রথমে পরিবারের সাথে স্বাভাবিক মিলামেশা করলেও পরে উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপে পড়ে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। তবে তার প্রশ্ন হোম কোয়ারেন্টাইন বলতে কি বুঝায় সেটা বুঝতে পারছিনা। আমাকে এখানে একটি আলাদা ঘরে থাকতে বলা হয়েছে, আমার খাওয়া দাওয়া সব এই রুমে ঘরে থেকে বের না হতে বলেছে। তবে যদি আমার প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয় তখনতো বাইরে যেতেই হয়, তখন আমার ছেলে মেয়েরা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আর এখানে আমার জন্য কোন ঔষধও নেই। তাই মূলত এখানে আমার কাজটা কি সেটাই আমি বুঝতে পারছিনা।

এদিকে উখিয়া উপজেলার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা আরেক জনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেণ, আমার বাড়িতে রুম আছে ৩ টি প্রত্যেক রুমে মানুষ আছে এখন আমার জন্য আলাদা রুম কোথায় পাব ?  তবুও আইন মেনে একটি আলাদা রুমে থাকছি কিন্তু এখানে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এবং খাবার দাবার আলাদা করে খাচ্ছি তবে এর দ্বারা কি হবে বা আদৌ কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর এভাবে বসে থাকলে পরিবারও চলবে কিভাবে। তবে দেশ ও জাতী স্বার্থে যা করার দরকার সেটা করতে রাজি বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নোবেল কুমার বড়–য়া বলেণ,আমাদের উপজেলাতে এ পর্যন্ত ১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইরে রাখা হয়েছে। তাদেরকে নিয়মিক স্বাস্থ্য কর্মীরা দেখভাল করছে এবং প্রত্যেক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। মুলত অনেকে অজ্ঞতার কারনে নিয়ম মানছেনা। তবে যেটুকু সামর্থ আছে সেটুকুর মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহীন আবদুর রহমান বলেণ, হোম কোয়ারেন্টাইন মানে (বিদেশ থেকে আগত) সেই ব্যাক্তিকে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ন আলাদা থাকতে হবে। পরিবারের কোন সদস্যের সাথে মেলামেশা করতে পারবেনা। যে রুমে থাকবে সেই রুমেই পাথরুম সহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা থাকবে হবে। এবং সেই রুমেই উনার খাবার পৌছে দিতে হবে। এবং সেখানে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়া সহ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তার ব্যবহারের কাপড় থেকে শুরু করে সব কিছু আলাদা ভাবে রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। কারন করোনা ভাইরাস একটি ছোয়াছে রোগ এটি খুব সহজেই আক্রান্ত ব্যাক্তির মাধ্যমে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এবং যে বাড়িতে রোগি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবে সে বাড়ির সকল সদস্যদেরও নিজের স্বার্থে একটু কঠিন হতে হবে।

এদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুজন সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেণ, ২১ মার্চের বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম জেলায় গত ১৯ দিনে ১৭০০ প্রবাসী কক্সবাজার এসেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছে খুব অল্প বাকিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর হোম কোয়ারেন্টাইন বলতে বাড়িতে রাখা মানে সেখানে এটা আরো বিপদ জনক। আমার মতে তাদের আলাদা কোন জায়গায় রাখা উচিত ছিল।

এখনো সময় আছে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে বাড়িতে না রেখে তাদের সরকারি ভাবে আলাদা কোন জায়গায় রাখা উচিত। প্রয়োজনে কোন হোটেল বা দূরে কোথাও রেখে চিকিৎসা করা দরকার।

এ ব্যপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেণ, কক্সবাজার গতকাল ২১ মার্চ পর্যন্ত ১১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এছাড়া কারাগারে আছে আরো ৪৭ জন। আর যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে বাড়িতে আছে তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মীরা খোঁজ খবর রাখছে পরামর্শ দিচ্ছে। এটাও সত্য অনেকের হয়তো সক্ষমতা নাই সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনে আলাদা জায়গা রাখার কথাও চিন্তায় আছে আমাদের সে জন্য ইতি মধ্যে বড় বড় হোটেল এবং জনসমাগম কম এমন দূরের অনেক ভবনের তালিকা করা হচ্ছে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ যত বেশি সচেতন হবে করোনা প্রতিরোধে তত সহায়ক হবে।

পাঠকের মতামত: