ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে হোটেল রুম সিন্ডিকেটের দখলে…

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :
কক্সবাজারে হোটেল মোটেল জোনে ছোট বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেল আছে ৪ শতাধিক। রুম আছে প্রায় ৩০ হাজার যেখানে প্রায় ২ লাখ পর্যটক অনায়াসে থাকতে পারে। তবে কোন বিশেষ দিন আসলেই যেন হাওয়া হয়ে যায় সমস্ত হোটেলের রুম। কোথাও কোন রুম পাওয়া যায় না। তবে বাড়তি দাম দিলে ঠিকই মিলে হোটেল রুম। মূলত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বহু বছর ধরে হোটেল মোটেল রুমে সিন্ডিকেটের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। কিছু অসাধু হোটেল মালিক,কিছু হোটেলের ম্যানেজার এবং কতিপয় ট্যূরঅপারেটরের সিন্ডিকেট মিলে এই রাম রাজত্ব করছে। এতে চরম ভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারী মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নিজামুল বাহার বলেন,আমার খুব কাছের এক বন্ধু ২১ ফেব্রুয়ারী ২ দিনের জন্য কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন সে জন্য আমি রুম বুকিং দিতে গিয়ে পুরু হোটেল মোটেল জোনে ঘুরে কোথাও কোন রুম পেলাম না। গতকাল আমি হোটেল লেমিচে গিয়ে ২১ তারিখের জন্য রুম চাইলে সেখানকার ম্যানেজার বলেছেন রুম নাই। পরে সেখান থেকে বের হয়ে বাইরে দাড়ালে একজন এসে বলে স্যার রুম লাগবে। বাড়তি দাম দিলে রুম পাওয়া যাবে। পরে সেই ব্যক্তি জানালো কোথাও রুম পাওয়া যাবে না। এখন সব রুম কালোবাজারির হাতে বিক্রি হবে। প্রতিটি ডাবল রুম ৫০০০ টাকা করে দিলে আমি রুম ব্যবস্থা করতে পারি। একই ভাবে ব্যাংকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার মামা স্বপরিবারে আসবে কুমিল্লা থেকে তারা ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে ৩ দিন থাকবে। আমি গত ২ দিন ধরে অন্তত ৩০ টি হোটেলে খোঁজ নিয়েছি কোথাও রুম পায় নি। পরে একজনের পরামর্শে গফুর নামের এক ব্যক্তির সাথে যোগযোগ করে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় রুম বুকিং দিলাম। অথচ এসব রুম সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায় ভাড়া দেয়। এভাবে অসংখ্য মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হোটেল লেমিচ, হোটেল মোহাম্মদিয়া, সী ওয়েলকাম, লেগুনা, ব্লু ওসান, ইকরা,তাহের ভবন,জিয়া গেস্ট হাউজ, জিয়া গেস্ট ইন, সেন্টমার্টিন সহ অসংখ্য হোটেলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারীর জন্য কোন রুম নেই কিন্তু সেখানে দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে রুম। পরে এর মধ্যে কয়েকটি হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে কাউন্টারে গিয়ে কোন রুম না পেলেও কিছু ট্যূরঅপারেটরের মাধ্যমে মিলছে রুম। এসময় রুস্তম নামেক একজনের সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি বলেন,এখানে অসংখ্য ট্যূর অপারেটররা আগে থেকে রুম কিনে রাখে, তারা কিছু বাড়তি দামে রুম বিক্রি ব্যবসা করে আর এসব কাজে কিছু হোটেল মালিক বা ম্যানেজার জড়িত থাকে। মূলত কিছু বিশেষ দিনেই এ সব ব্যবসা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বছরের কিছু বিশেষ দিনে বেশি পর্যটক আসার সম্ভবনা থাকলে সেসব দিনে কিছু ব্যক্তি এবং ট্যূরঅপারেটরের ব্যবসায়িরা মিলে বিভিন্ন হোটেল বা গেস্ট হাউজ থেকে নির্দিস্ট দামে রুম কিনে রাখে। তারাই আবার এসব রুম বেশি দামে বিক্রি করে। এতে হোটেলের লাভ হচ্ছে যদি কোন কারনে গেস্ট না আসে তাহলেও তারা আগাম টাকা পেয়ে গেল। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় পর্যটকরা,তাদের ২ হাজার টাকার রুম ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। আর কিছু ফ্ল্যাটবাড়ি আছে যেগুলো নামে ফ্ল্যাটবাড়ি হলেও করে হোটেল ব্যবসা। তাদের কোন লাইসেন্স নাই, কোন টেক্স দিতে হয় না কিন্তু তারা রুম ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি হোটেল ম্যানেজার বলেন,মূলত ট্যূর অপারেটর সমিতির কয়েকজন এখানে তাদের মানুষজন দিয়ে এসব কাজ করে। আর ট্যূর অপারেটর আছে প্রায় ২০০ এর মধ্যে সবাই যে এই কাজ করে সেটাও সঠিক না। মুলত কিছু আছে যারা এসব কাজ করে বাকিরা টিকিট বা জাহাজের ব্যবসা করে। তবে অনেক জায়গায় স্থানীয় কিছু ছেলেরাই এই রুম কেনার কাজে থাকে।
এ ব্যাপারে ট্যূর অপারেটর ব্যবসায়ি এম. রেজাউল করিম বলেন, আমার জানা মতে মাত্র গুটি কয়েকজনে রুম ব্যবসা করতে পারে। তবে এতে বেশির ভাগ সময় জড়িত থাকে হোটেলের ম্যানেজাররা। তারা বিভিন্ন ট্যূর অপারেটরের নামে রুম বুকিং করে রাখে। তারাই সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে এসব রুম পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে। এটা আসলে ঠিক না,এতে পর্যটকরা কক্সবাজার সম্পর্কে বিরুপ ভাবনা পোষন করে।
এদিকে ট্যূর অপারেটর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাবুদ্দোলা আশেক বলেন,এসব অনৈতিক কাজ কোন কক্সবাজারের ট্যূরঅপারেটর করেনা। এসব কাজ করে ঢাকা ভিত্তিক ট্যূরঅপারেটর এবং হোটেল ম্যানেজাররা। এছাড়া বেশির ভাগ হোটেলের নাম এবং ফোন নাম্বার এখন বিভিন্ন অনলাইনে আছে,মানুষ সরাসরি সেখানেই যোগাযোগ করে। তবে আমি নিশ্চিত ঢাকার ট্যূরঅপারেটর নামধারী কিছু অসাধু ব্যাক্তি হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে এসব অন্যায় কাজ করে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, মূলত কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি করে হোটেল ব্যবসায়ি কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল ব্যবসাকে নস্ট করছে। তারা ভিন্ন জেলার লোক দিয়ে এখানে যতসব আজে বাজে কাজ করছে।একই সাথে কিছু অসাধু ব্যবসায়িও থাকতে পারে। আমার জানা মতে প্রশাসনের কাছে সব খবর আছে উনারা চাইলে সব কিছু তড়িৎ ব্যবস্থা হতে পারে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ট্যূরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, হোটেলের রুম নিয়ে এ ধরনের কাজ হয় এটা আমার জানা ছিল না। খুব দ্রুত বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: