এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার,৭ এপ্রিল ॥
কক্সবাজারে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পাহাড় কাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে তিন সচিব,পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১২ সরকারী কর্মকর্তাকে আইনী নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি(বেলা)। ৭ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার ডাকযোগে এ নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ও বেলা’র নির্বাহী কমিটির সদস্য বাহরীন খান। নোটিশে পাহাড় কর্তন বন্ধ, পাহাড়ে নির্মিত সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে আইন ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথ সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছে বলা। একইসাথে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণ করে আদায় এবং দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। এ বিষয়ে নোটিশ প্রাপ্তদের গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের ৭ দিনের মধ্যে নি¤œস্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগে নোটিশগ্রহীতা সরকারী কর্মকর্তাদের বিরূদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তারা হলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
নোটিশে বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলাব্যাপী সম্প্রতি পাহাড় কাটা বেড়ে গেছে। পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতি,বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আবার অনেকেই সরকারী পাহাড়ী জমি দখল করে পাহাড় কেটে প্লট তৈরী করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে নেয়া সরকারী কোন অনুমোদন। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলা যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলাসমূহে অবস্থিত সকল পাহাড় কাটা বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া ওই জেলাসমুহে অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে আদালত উল্লেখিত এলাকায় পাহাড় কেটে কোন আবাসন প্রকল্প স্থাপন করা হয়ে থাকলে তা ধ্বংস করারও নির্দেশ প্রদান করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৯ মার্চ এ নির্দেশদেন আদালত। পাশাপাশি কক্সবাজার শহরে পাহাড় কাটা নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীনও রয়েছে।
একই বিষয়ে আদালতের একাধিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পাহাড় কাটা বন্ধ ও পাহাড়ে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করতে না পারা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসিনতার পরিচায়ক। একইসাথে আদালত অবমাননাও বটে। নোটিশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার নগরীর পাহাড় ক্রমশই কমতে কমতে এ নগর পাহাড় শুন্য হবার উপক্রম হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। শ্রীহীন হয়ে পড়ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। পাহাড় কাটার দীর্ঘ প্রভাব হিসেবে পাহাড় ধ্বস ও প্রাণহানির ঘটনাও উল্লেখিত এলাকায় বিরল নয়।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ও বেলা’র নির্বাহী কমিটির সদস্য বাহরীন খান বলেন, একই বিষয়ে আদালতের একাধিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পাহাড় কাটা বন্ধ ও পাহাড়ে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করতে না পারা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসিনতার পরিচায়ক। একইসাথে আদালত অবমাননাও বটে। পাশাপাশি দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ ব্যতিরেকে পাহাড় বা টিলা কাটা বা মোচন করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাহাড় কেটে আবাসন নির্মাণ কোনভাবেই জাতীয় স্বার্থের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না এবং এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক আবাসনের বিষয়টি অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ হিসেবে ঘোষিত হয়নি।
পাঠকের মতামত: