ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আকাশচুম্বি মাছ-মুরগির দাম

fish-henশাহেদ ইমরান মিজান  :
রমজানকে সামনে নিয়ে আকাশচুম্বি পর্যায়ে পৌঁছেছে মাছ ও মুরগির দাম। মাছের দাম এক লাফে বেড়ে দিগুণ হয়েছে। মুরগির দামও বেড়েছে দিগুণের কাছাকাছি। মাছ-মুরগির আকাশচুম্বি দাম হওয়ায় নাভিশ্বাস চলছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে নিন্ম ও মধ্যভিত্তের আয়ের ক্রেতারা চরম বিপাকে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাছ ও মুরগির বাজার মনিটরিং না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতদিন মাছ ও মুরগির দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও রমজান শুরুর সাথে সাথে তা বেড়ে গেছে। এমনভাবে বেড়েছে; এক লাফে তা দিগুণ পর্যায়ে ঠেকেছে। রমজানকে সামনে নিয়ে সব ধরণের মাছের দাম বেড়েছে। কেজি এক’শ টাকা মাছের দাম বর্তমানে দু’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম দিগুণ না হলেও তার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার শহরের কালুরদোকান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৫০ টাকার ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়, বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে দেড়হাজার টাকায়, ৩০০ টাকার টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়, ৩০০ টাকার বাটা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০টাকায়, ১০০ টাকার লইট্ট্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে দেড়’শ টাকায়, মাঝারি কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, ৩০০ টাকার মাইট্ট্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, ৫০০ টাকার বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়, ৩০০ টাকার লইল্যা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সাগরের সব ধরণের মাছের দাম একই হারে বেড়েছে। তবে লোনাপানির মাছের দাম বাড়লেও মোটামুটি কম। পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ লোনাপানির ঘেরের মাছের বেড়েছে। পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের সবকটি বাজারে এই হারে বিক্রি হচ্ছে মাছ। তবে বড়বাজার ও বাহারছড়া বাজারে অন্যসব বাজারের চেয়ে কিছুটা কম। উপজেলা পর্যায়ে অস্বাভাবিক বেড়েছে মাছের দাম।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানে চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে মাছের সংকট রয়েছে। যার কারণে মাছের দাম বেড়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, চাহিদা বাড়ার কারণে মাছের পাইকারি কেনা দাম বেড়েছে। তাই বাজারেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত দাম নেয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা কোন জবাব দিতে পারেননি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারী বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য অনেক। খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাছের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রুমালিয়ারছড়ার ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘রোজা আগের দিনই মাছের স্বাভাবিক দাম ছিল। রোজাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাছের দাম বাড়িয়েছে। প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা একচেটিয়াভাবে দাম বাড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’
রমজান মুখে মাছের দামের সাথে মাংসের দামও বেড়েছে। তবে গরুর মাংসের দাম কম বেড়েছে। এর চেয়ে অস্বাভাবিক বেড়েছে মুরগির দাম। ফার্ম মুরগির মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায়। আর লেয়ার মুরগির দাম আড়াই’শ থেকে ৩০০ টাকায়। ২৫০ টাকার দেশী মুরগির দাম বেড়ে এক লাফে সাড়ে ৩০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগ মতে, স্বাভাবিক সময়েও কক্সবাজার শহরের অন্যান্য বাজারের চেয়ে পিটিস্কুল বাজার ও কালুরদোকান বাজারে মাছের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। যে সব মাছ অন্য বাজারে ২০০ টাকায় বিক্রি হয় সে মাছ ওই দু’বাজারে বিক্রি হয় আড়াইশ টাকায়। ছোট মাছ থেকে শুরু করে বড় মাছেও এভাবে বাড়তি দাম আদায় করা হয়।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে একযোগে দাম বাড়তি রাখায় ক্রেতারাও বাড়তি মাছ কিনতে বাধ্য হয়। এভাবে বাড়তি দাম নেয়ায় সপ্তাহ আগে পিটিস্কুল বাজারে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ওই সময় লইট্ট্যা মাছের স্বাভাবিক দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা থাকলেও পিটিস্কুলের ওই ব্যবসায়ী এককেজি লইট্ট্যা মাছের দাম হাঁকেন ১৫০ টাকা। এই নিয়ে বাড়াবাড়িতে ওই ক্রেতা ও ওই ব্যবসায়ীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়। পরে বাজারের অন্যান্য লোকজন এগিয়ে এসে তাদের সংযত করেন। বাড়তি দাম নেয়ায় এভাবে প্রায় সময় পিটিস্কুল বাজার ও কালুরদোকানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
রুমালিয়ারছড়ার বাসিন্দা দৈনিক হিমছড়ি সম্পাদক হাসানুর রশীদ বলেন, ‘অন্যান্য বাজারের চেয়ে পিটিস্কুল বাজারে মাছের দাম বেশি এটা সত্য। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বাহারছড়াসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মাছ কিনি। এ ব্যাপারে দীর্ঘ সময়েও কোন প্রতিকার হচ্ছে না।’
রমজানকে নিয়ে মাছ-মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় সাধারণ ক্রেতারা। এই জন্য প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করার দাবি জানান তারা।

 

পাঠকের মতামত: