এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার :: কক্সবাজারে সিন্ডিকেট করে বরফের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রতিবাদে মাছ বেচাকেনা বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রাঙ্গণে কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ, কক্সবাজার জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি ও কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ নুরুল ইসলাম চিশতীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, সিন্ডিকেট করে বরফে মূল্য বৃদ্ধিও প্রতিবাদে সব ধরণে মাছ বেচাকেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একটি বরফ তৈরিতে খরচ হয় ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা। ১০০ টাকায় বরফ বিক্রি করলেও স্বাভাবিক হতো। কিন্তু এখন মালিকেরা সিন্ডিকেট করে সেই বরফ বিক্রি করছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া এসব বরফের মানও ভাল না। বাইরের জেলার একটি বরফের ওজন ১০০ কেজি। কিন্তু এখানকার বরফ সাইজেও ছোট ও ওজন মাত্র ৩০ কেজি। অধিক দামেও বরফ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে বরফ না নিলে নানা ধরণের চাপ ও হুমকী দেয়া হয়। বাইরের জেলা থেকে কেউ বরফ সরবরাহ করতে চাইলে মিল মালিকদের কাছে নাজেহাল ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। মৎস্য ব্যবসায়ীদেরও তারা বাইরে থেকে বরফ আনতে দেয় না। কেউ বরফ নিয়ে আসলে তাকে আর মিল মালিকেরা বরফ দেয় না। মোটকথা মৎস্য ব্যবসায়ীদের পুরোদমে বরফ মিল মালিকেরা জিম্মি করে রেখেছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউন শিথিল ও ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। যা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে খালাস হয়। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দৈনিক ২০-২৫ টি ট্রাকে মাছ রপ্তানির লক্ষ্যে লোড করা হয়। এসব ট্রাক প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। বিদেশেও সুনামের সাথে কক্সবাজারের মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। এ জন্য মাছ মজুদ, সংরক্ষণ ও রপ্তানিতে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার বরফের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে কক্সবাজারের ২০টির মতো বরফ মিলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস বরফ উৎপাদন হয়। তাই ঘাটতি মেটাতে চট্টগ্রাম, মহিপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, খুলনা, বরগুনাসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে বরফ সংগ্রহ করেন কক্সবাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কিছুদিন ধরে কক্সবাজারে বরফ মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট তৈরি করে অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করেছে। মাছ মজুদ ও সংরক্ষণে বরফেই খরচ হচ্ছে বিপুল টাকা। ফলে লাভের বিপরীতে লোকসান গুণতে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
প্রতিবাদে সমাবেশে কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু ও সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু বলেন, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (ফিশারী ঘাট) কে কেন্দ্র করে প্রায় ৫ লাখের অধিক মানুষ মৎস্য ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মৎস্য ব্যবসা করে এসব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর পুরোদমে সাগরে মৎস্য আহরণ চলছে। সাগর থেকে মৎস্য আহরণের পর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দামে বরফ কিনতে গিয়ে চরম লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বরফ মিল মালিকরা এই নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এরশাদ উল্লাহ সওদাগর, বাশি সওদাগর, কায়সার সওদাগর, নাছির সওদাগর, জসিম উদ্দিন সওদাগর, আমির হামজা সওদাগরসহ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
পাঠকের মতামত: