ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে কক্সবাজারে মোতায়েন হচ্ছে আনসার

ডেস্ক নিউজ ::   মাদকপাচার প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কক্সবাজারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি নতুন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও দুটি নতুন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির পক্ষ থেকে আনসারের তিনটি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ ও র‌্যাব থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর আলাদা করে একটি ব্যাটালিয়নের প্রয়োজন কেন হলো জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত। তারপরও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। তদুপরি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে অতিরিক্ত প্রায় ১১ লাখ মানুষ কক্সবাজার এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্যেই কক্সবাজারে আনসারের একটি নতুন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৩৬টি পুরুষ ও দুটি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পার্বত্য অঞ্চল ও সমতল এলাকায় সন্ত্রাস দমন এবং ট্রাফিক ডিউটিতে মহানগরগুলো ছাড়াও সারাদেশে আনসার ব্যাটালিয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ জনবল নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া বাহিনীর নিজস্ব স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক দায়িত্বে মোতায়েন আছে আরও ১৫ শতাংশ জনবল। বাকি ১৫ শতাংশ জনবল ছুটি, অসুস্থ, প্রশিক্ষণ ও জরুরি মোতায়েনের জন্য সংরক্ষিত রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনও শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ জনবলকে সার্বক্ষণিক অপারেশনাল দায়িত্বে মোতায়েন করা হয়। আনসারের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ জনবল সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকতে হচ্ছে। যা সৈনিকদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেজন্যই আনসারে নতুন ব্যাটালিয়ন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আনসারের নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের জন্য দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মাদকপাচার ও দাঙ্গা মোকাবিলায় এরইমধ্যে বিপুল সংখ্যক আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে ওঠায় এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় এ জেলায় আনসার মোতায়েনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে আনসার মোতায়েন করা হয়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং বিদ্যমান জনবলের মানোবল অক্ষুণ্ন রাখতে আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যাটালিয়নে অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, সার্জেন্ট অ্যাডজুটেন্ট, কোম্পানি কমান্ডার ও একজন ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার, ল্যান্স নায়েক ৪২ জন, নায়েক ৩৮ জন ও ১২ জন হাবলিদারসহ ৪১৬ জন সদস্য থাকবে।
আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার ও সমন্বয় বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২২ জুলাই প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় আনসার ও ব্যাটালিয়ন গঠন ও ব্যাটালিয়নের জন্য ৪১৬টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।‘
কক্সবাজারে নতুন একটি আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন প্রসঙ্গে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরের উপ-পরিচালক (জেনারেল) মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের কাজ। নিরাপত্তা বলতে যা বোঝায় তার সব দায়িত্বই পালন করবে আনসার। সরকারের যেকোনও কাজের জন্য যে সহযোগিতা চাওয়া হয়, সেই সহযোগিতা দেওয়া হয়।’
বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতেও আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন আছে বলেই সরকার আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছে। এখনও এর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক কাজ আছে যেটা আনসার বাহিনী ছাড়া সম্ভব নয়। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে-পরে দু’ধরনের অ্যাক্টিভিটিজ আছে। আগের কাজটা হচ্ছে প্রতিরোধমূলক। এই প্রতিরোধমূলক কাজের বেশিরভাগই আনসার করে থাকে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীকে সহযোগিতা করে আনসার। যেকোনও বাহিনী ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কাজের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা চায় আমরা সেই সহযোগিতা দিয়ে থাকি। সরকার থেকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর্মি ও বিজিবির সঙ্গেও কাজ করে আনসার।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব হাবিব মো. হালিমুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে ব্যবহারের জন্যই আনসার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং কক্সবাজারে নতুন একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হচ্ছে।’

পাঠকের মতামত: