ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মহেশখালী ঘিরে মহাযজ্ঞ ঃ আসছেন ১২ মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্য

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার :

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী নিয়ে শুরু হচ্ছে উন্নয়ন ও উৎপাদনের মহাযজ্ঞ। মহেশখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও উপকূলে বিগত কয়েক দশকে জেগে উঠা চরভূমিকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন ও উৎপাদনমূখী প্রকল্প স্থাপনের বহুমুখী মাষ্টারপ্ল্যান। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি ব্যবহারের জন্য সরেজমিন পরিদর্শন ও লে আউট প্ল্যান চূড়ান্ত করতে (২৮ জানুয়ারী) বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসছেন সরকারের উচ্চপদস্থ ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২টি মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা থাকছেন এই দলে। তারা মহেশখালী দ্বীপে আগামী শনিবার পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন, লে আউট প্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পূর্বে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সাগর থেকে নতুনভাবে জেগে ওঠা ভূমি নিয়ে অন্ততঃ আধাডজন উৎপাদনমূখী প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দ্বীপের জমি নিয়ে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ভূমি ব্যবহারের জন্য লে আউট প্ল্যান প্রস্তুত করার কাজও শুরু হয়েছে। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। মহেশখালীর উত্তর প্রান্তে মাতারবাড়ী দ্বীপেই স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আরো স্থাপন করা হচ্ছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ডিপো ও পাইপলাইন। এগিয়ে চলছে এলএনজি প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া। এভাবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এনার্জি হার্ব এ রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে মহেশখালী। বিদ্যুৎ শক্তি সহজলভ্য হলে মহেশখালী দ্বীপে একের পর এক বড় মাপের শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন উদ্যোক্তারা। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে স্বল্পায়তনের একটি সাগর চ্যানেল দ্বারা বিচ্ছিন্ন মহেশখালী দ্বীপের আয়তন দুই হাজার ৪৯১ দশমিক ৮৬ বর্গকিলোমিটার। এই দ্বীপের মৌজার সংখ্যা ৩০, ইউনিয়ন আটটি এবং একটি পৌরসভা বিদ্যমান। চার লক্ষাধিক লোকের বসবাস দ্বীপটিতে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দ্বীপের পশ্চিমে গভীর সাগরের কারণে এই দ্বীপের অপর এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তুলামূলক কম গভীরতার চট্টগ্রাম বন্দরে বেশী ড্রাফটের মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে না পারলেও বেশী গভীরতার প্রস্তাবিত সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দরে অনায়াসেই যে কোন ড্রাফটের সামুদ্রিক মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে পারবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। ফলে বিশ্বের বড় বড় সমুদ্র বন্দর সমূহের সাথে সরাসরি কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহণ এবং নৌ-বাণিজ্য নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে আগামীর বাংলাদেশ। এভাবে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও পরিবহণ সহজ হওয়ায় দ্বীপে আমদানি করা গ্যাসের ডিপো স্থাপনসহ বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তদুপরি দ্বীপে নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে নতুন জেগে ওঠা চরভূমি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, মহেশখালী দ্বীপের ৩০টি মৌজার মধ্যে ৯টিতে সাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে চরভূমি জেগে উঠছে। এরই মধ্যে ২৬ হাজার ৩০০ একর নতুন জেগে ওঠা চর শনাক্ত করা হয়েছে। জেগে ওঠা চরের জমি রীতিমতো খুলে দিয়েছে দ্বীপটির ভাগ্যের দরজা। তিনি জানান, দ্বীপের মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কালারমারছড়া, উত্তর নলবিলা, অমাবস্যাখালী, কুতুবজোম, ঘটিভাঙ্গা, হামিদরদিয়া ও সোনাদিয়া মৌজায় সাগর থেকে জেগে উঠেছে এই পরিমাণ জমি। আদিকাল থেকেই মহেশখালীতে উৎপন্ন হচ্ছে লবণ, চিংড়ি ও অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। এখানকার মিষ্টি পান স্বাদগুণে বিশ্ব খ্যাত। উপরোক্ত সব কারনে অপার সম্ভাবনার মহেশখালীতে জেগে উঠা ভূমির যথার্থ উৎপাদনমূখী ব্যবহারে এ প্রতিনিধি দলটির মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে এলাকার লোকজন মনে করছেন।

পাঠকের মতামত: