ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মহেশখালী আরও ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মহাপরিকল্পনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে বিদ্যুৎ হাব হিসেবে গড়ে তুলতে আটটি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ও একটি ৩০০০ মেগাওয়াটের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এর জন্য ইতোমধ্যে যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হয়েছে। এইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য অধিগ্রহন করা হবে কালারমারছড়া, হরিয়ারছড়া, পানিরছড়া, হোয়ানক, হেতালিয়া ও অমাবস্যাখালীর ৫ হাজার ৫৮০ একর জমি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা এবং কাতার বা অন্য কোনো দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মহেশখালীতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ যৌথভাবে শেষ করেছে ভারত, জার্মানি এবং বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, যা চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। ভারতের স্টেজ এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেড ও স্টেজ এনার্জি সার্ভিসেস জার্মানি এবং বাংলাদেশের বিসিএল অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড যৌথভাবে এ খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মহেশখালীতে জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি উইংয়ের যুগ্ম প্রধান খলিলুল রহমান খান এ প্রকল্পের ওপর মতামত দিতে গিয়ে সম্প্রতি গণমাধমকে বলেছেন, বাংলাদেশে এমন মেগা প্রকল্পের জন্য একসঙ্গে এত পরিমাণ জমি পাওয়া কঠিন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি দ্বীপ অঞ্চলে হওয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য খুবই উপযুক্ত। মহেশখালীর কালারমারছড়া, হরিয়ারছড়া, পানিরছড়া, হোয়ানক, হেতালিয়া ও অমাবস্যাখালী মৌজার মোট ৫ হাজার ৫৮০ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহন করতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে মূল প্রকল্পে যাওয়ার আগেই ভূমি অধিগ্রহনের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৯ মে প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ বিভাগ উল্লেখ করেছে, বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৩ হাজার ৯৫ মেগাওয়াট, যা বছরে ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হয়, ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালে ৩৩ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট হবে। এজন্য সরকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যার সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকে সবচেয়ে কম খরচ বিবেচনা করা হয়। ২০১০ সালে নেওয়া বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে দেশীয় ও আমদানিকৃত কয়লা ৫০ শতাংশ, দেশীয় ও আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি আকারে) ২৫ শতাংশ, তেল ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক শক্তি ২০ শতাংশ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রবণ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থাপন হিসেবে মহেশখালীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বিদ্যুতের হাব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখানে কয়লা ও এলএনজি টার্মিনাল হচ্ছে, গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। বেশ ক’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হলে দেশের অর্থনীতিই বদলে যাবে।

পাঠকের মতামত: