এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ২৯ মে ॥
আগামী ৪ জুন কক্সবাজার সদরের উপকুলীয় ইউনিয়ন পোকখালী ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইউনিয়নটি। বরাবরের মতো ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার, ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করায় ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে অজানা আতংক।
দিনদিন বহিরাগত লোকজন, দাগী ও ফেরারী আসামীদের আনাগোনা বৃদ্ধিতেও ভাবিয়ে তুলেছে ইউনিয়নবাসিকে। বিগত দুই বারের নির্বাচনে এ ইউনিয়নে দায়িত্বরত ম্যাজিষ্ট্রেটের উপর হামলা, সরকারী ১১ টি রাইফেল লুট ও হত্যার মতো ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেছে। বরাবরের মতো এবারও এধরনের ঘটনার আশংকা করছেন খোদ প্রার্থীরাও। এবিষয়ে এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য দাবী করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।
এলাকাবাসি ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, পোকখালী ইউনিয়ন থেকে আ.লীগ-বিএনপি বড় দু’দলের মনোনীত প্রার্থী থাকলেও এই দুই দলে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে একাধিক। আ.লীগে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৫ জন ও বিএনপিতে বিদ্রোহীসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে দুই জন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৪ জন। ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১২৯৯৮ জন । ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় প্রার্থীই সব চেয়ে বেশি ঝু^ঁকিপূর্ণ মনে করছেন ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম গোমাতলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে প্রায় ভোটার রয়েছে ১৪’শ ভোট।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ১১ প্রার্থীরা হচ্ছেন, স্বতন্ত্র এম.আবদুল্লাহ খান (আনারস), মোঃ ওবাইদুল্লাহ খান (টেলিফোন) , কুতুব উদ্দিন চৌধুরী (চশমা), সাইফুদ্দিন (ঘোড়া)। ইিউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি’র প্রার্থী সেলিম উদ্দিন ( ধানের শীষ), বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সোহেল (মোটর সাইকেল)। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক মহীদুল্লাহ ( নৌকা), বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক (কারান্তরিন ) রফিক আহম্মদ ( ডোল) , ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন (রজনীগন্ধা), আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক তিন বারের মেম্বার সামশুল আলম (টেবিল ফ্যান) ও আওয়ামী লীগে নতুন আগন্তুক বর্তমান চেয়ারম্যান মৌলভী ফরিদুল আলম (অটোরিক্সা)। স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ খান ছাড়া সব প্রার্থীরাই আচরণবিধি লংঙ্গনের অভিযোগে জেলা নির্বাচন অফিসার লিখিত নোটিশও দিয়েছেন প্রার্থীদের।
এদিকে, গত ১৭ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে মডেল থানাও ওসি , উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট রির্টানিং অফিসারের নেতৃত্ব পরিবার পরিকল্পনা হল রুমে সকল উপজেলার সকল চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে আইনশৃংঙ্খলা মিটিং অনুষ্টিত হয়।
মিটিং এ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী হেভিওয়েট প্রার্থী এম. আবদুল্লাহ খান ওই ৮নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিযোগ করেন। এই কেন্দ্রে গত নির্বাচনেও ভোট জালিয়াতি হয়েছে এবং এবারের নির্বাচনেও করার পরিকল্পনার কথাটিও সরাসরি উত্তাপন করা হয় মিটিংএ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ খানকে গুম, প্রয়োজনে হত্যার পরিকল্পনা করে বলেও অভিযোগ করেন সভায়। পরবর্তীতে ইউএনও এবং থানার ওসি এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন সভায়।
বড় দুই দলের কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীও একই অভিযোগ করে বলেন, এই কেন্দ্রটিতে প্রতিবারই ভোট ডাকাতি আর জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও কিছু প্রার্থী ভোট ডাকাতি করার পরিকল্পনা এখন থেকেই নিয়েছে। এমন কি ওই মহলের পরিচিত প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগেরও পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। তারা নীল নকসা বাস্তিবায়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়ার কারণে সেখানে নির্বাচনের দিন কিংবা নির্বাচন পরবর্তী বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছেন।
তাই তারা এই কেন্দ্রটিতে ম্যাজিষ্ট্রেট, পর্যাপ্ত বিজিবি ও র্যাব সহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করার দাবী করে তারা।
প্রার্থীরা জানান, গত ২০০১ সালের নির্বাচনে ১১ জন পুলিশ সহ একজন ম্যাজিষ্ট্রেট গুরুতর আহত হয়। সরকারী ১১টি অস্ত্র লুট হয়। গত ২০১১ সালের নির্বাচনে সামশু নামের এক ব্যক্তি নিহত ও একাধিক ব্যক্তি আহতের ঘটনাও ঘটে।
————–
পাঠকের মতামত: