কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে-বাজারে সম্প্রতি সময়ে ভূঁয়া হোমিও চিকিৎকের দৌরাত্মে আশংকাজনহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ভূঁয়া ও ডিগ্রিবিহীন তথাকথিত হোমিও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়তই সাধারন লোকজন প্রতারণার শিকার হলেও এ বিষয়ে কোন ধরনের নজর নেই খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের! স্বাস্থ্য বিভাগের এহেন নিরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় সচেতন মহল চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে পেকুয়ার হাটে বাজারে ভূঁয়া হোমিও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিনে পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাটে-বাজারে পরিদর্শন করে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু অর্ধ শিক্ষিত লোক নিজেদের রাতারাতি হোমিও চিকিৎসক পরিচয়ে চেম্বার ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের গ্যারান্টি সহকারে চিকিৎসা করছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হোমিও চিকিৎসা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের কতিপয় লোক নিজেদের হোমিও চিকিৎসক পরিচয়ে চেম্বার খুলে বিভিন্ন হাটে বাজারে চিকিৎসার নামে রমরমা প্রতারণা বানিজ্যে মেতে উঠেছে।
জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগা পেকুয়া বাজারেও একাধিক লোক হোমিও চিকিৎসক পরিচয়ে অপচিকিৎসায় মেতে উঠেছে। প্রতিনিয়তই পেকুয়া বাজারের এসব হোমিও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন। পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সক্রিয় রয়েছে একাধিক হোমিও চিকিৎসক। শিলখালী ও টইটং বাজারে সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকজন ভূঁয়া হোমিও চিকিৎসক। এছাড়াও পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিনের সবুজ বাজার ও আরবশাহ বাজারে বেশ কয়েকজন ভূঁয়া হোমিও চিকিৎসকের চেম্বার রয়েছে। দিনরাত সমানতালে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার দোহাই দিয়ে এসব হাট ও বাজারে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র সাধারন লোকজনের রোগ-ব্যধিকে পুঁজি করে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামীন হাট ও বাজারে একাধিক ব্যক্তি নিজেদের হোমিও চিকিৎসক পরিচয়ে সাধারন লোকজনদের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন বলে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে।
পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাটে বাজারে ভূঁয়া হোমিও চিকিৎসকদের তৎপরতার বিষয়টি স্বীকার করে পেকুয়া উপজেলা হোমিও চিকিৎসক পরিষদের সাধারন সম্পাদক পেকুয়া বাজারের বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক ডা: মো. আশেক উল্লাহ এ প্রতিনিধিকে জানান, কিছু লোক হোমিও চিকিৎসাশাস্ত্রে তিন মাসের হোমিও প্রশিক্ষণ নিয়ে রোগী দেখছেন। তারা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটে বাজারে কিছু লোক নিজেদের হোমিও চিকিৎসক পরিচয় দিলেও তাদের হোমিও অধিংকাশ লোকের হোমিও চিকিৎসাশাস্ত্রে কোন ধরনের ডিগ্রি নাই। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে হোমিও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে এসব প্রতারকরা তাদের প্রতারণা বানিজ্য চালাচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের জনৈক মহিলা রোগী অভিযোগ করেছেন, তিনি কিছু দিন পূর্বে পেকুয়া বাজারের এক হোমিও চিকিৎসকের কাছে টায়ফয়েডের চিকিৎসার যান। ওই হোমিও চিকিৎসক তাকে গ্যারান্টি দিয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে টাইফয়েড রোগ নির্মূল হবে। আর তাকে প্রায় তিন হাজার টাকার হোমিও ঔষধ ধরিয়ে দেন ওই হোমিও চিকিৎসক। ওই চিকৎসকের নাম জিজ্ঞাসা করলেও ওই মহিলা রোগী নাম প্রকাশ করেনি। তিনি আরো জানান, তার কাছ থেকে ওই চিকিৎসক তিন হাজার টাকা আদায় করে কিছু হোমিও ঔষধপত্র দিলেও এক মাসেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ বিষয়ে পেকুয়া ম্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সের এক মেডিকেল অফিসার জানান, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হোমিও চিকিৎসায় কোন রোগীর ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও পেকুয়ার হাটে-বাজারে কিছু লোক নিজেদের হোমিও চিকিৎসক পরিচয়ে সাধারান লোকজনের সাথে প্রতারণা করছে। তিনি এ বিষয়ে সাধারন লোকজনকে সচেতন হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: