পেকুয়ায় চোরাই কাঠ দিয়ে এবার ফিশিং বোট তৈরি করছে খোদ কোষ্টগার্ড কর্মকর্তা। বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করে চকরিয়ার বদরখালী ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান বোট তৈরির মহোৎসবে মেতেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অনুমতি না নিয়ে ওই কর্মকর্তা নিজেই ফিশিং বোট তৈরি করছেন। কাঠ চোর সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এখন কোষ্টগার্ডের কথা বলে বোট তৈরির মহোৎসবে মেতেছেন তিনি। সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করে নেমে পড়েছেন বোট তৈরির কাজে ওই কর্মকর্তা। নিষিদ্ধ গাছ দিয়ে তৈরি করছেন নিজ মালিকানাধিন বোট। কোষ্টগার্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় চলছে বোট তৈরির হিড়িক। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে করিয়ারদিয়ার বিভিন্ন মোকাম থেকে একাধিক বোট তৈরি করে কোষ্টগার্ড। পরে তৈরিকৃত বোটগুলো মোটা দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় টাকা। এদিকে বনাঞ্চল উজাড় করে বোট তৈরি অব্যহত থাকলেও এর প্রতিকার নেই। খোদ সরকারি পোশাকধারী কোষ্টগার্ডের কর্মকর্তা অবৈধ বোট তৈরি ব্যবসায় জড়িয়ে যান। উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া পুর্ব সাইডপাড়া এলাকায় নির্মিত হচ্ছে একটি ফিশিং বোট। উজানটিয়া খালের মুখে বোট তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানায় সাইড পাড়া এলাকার আছাদ আলীর ছেলে বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন প্রকাশ পিডার নাছির ওই বোটটি তৈরি করছেন। বলা হচ্ছে এটি কোষ্টগার্ড সদস্যদের যাতায়তের জন্য তৈরি। অভিযোগ উঠেছে নাছির উদ্দিন গাছ পাচারের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে উজানটিয়া খালের মোহনায় চলছে তার বোট তৈরি ব্যবসা। ওই মোকাম থেকে নাছির ইতিপুর্বে বেশ কয়েকটি ফিশিং ও কার্গো বোট তৈরি করে। পরে এসব বোট বিক্রি করে নাছির। তাকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে বদরখালী ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান। বোট তৈরি ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তারা দু’জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নাছির উদ্দিনের মালিকানাধিন একটি ইঞ্জিন চালিত বোট আছে। ওই বোট দিয়ে বদরখালীর কোষ্টগার্ড সদস্যরা অভিযানে যায়। ওই সুবাধে নাছিরের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে কোষ্টগার্ড কর্মকর্তার। বর্তমানে দু’জনেই বোট তৈরি ব্যবসায় লিপ্ত। বনের কাঠ দিয়ে অবাধে বোট তৈরির জন্য নেপথ্যে থেকে নাছিরকে সহযোগিতা করে কোষ্টগার্ড কর্মকর্তা মশিউর রহমান। যেকোন ঝুট ঝামেলা ও প্রতিবন্ধকতায় নাছিরের মুল শক্তি হিসেবে কাজ করেন ওই কর্মকর্তা। গতকাল ২৬জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে করিয়ারদিয়ার পুর্ব সাইড পাড়া মাতামুহুরী ও উজানটিয়া খালের ত্রি-মোহনায় একটি ফিশিং বোট তৈরির কাজ চলছে। নাছির উদ্দিনের বাড়ির নিকট ওই বোটটি তৈরি করা হচ্ছে। কথা হয় নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ঝর্নার সাথে। তিনি জানায় এক মাস ধরে চলছে বোট তৈরির কাজ। বদরখালী ফাঁড়ির কোষ্টগার্ড কর্মকর্তা মশিউর রহমান বোটটি তৈরি করছে। আমার স্বামীর বোট দিয়ে তারা যাতায়াত করত। বোটটি ছোট হওয়ায় আরো বড় বোটের প্রয়োজন হওয়ায় বড় করে এ বোটটি তৈরি করছে কোষ্টগার্ড। বোট তৈরির অর্ধেক টাকা আমার স্বামী দিচ্ছে। আর অর্ধেক দিচ্ছে টাকা কোষ্টগার্ড। জানতে চাইলে ওই গৃহবধু জানায় তার স্বামী সকালে চট্টগ্রামে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে নাছির উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সংযোগ বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
ইউপি সদস্য জাফর আলম চৌধুরী জানায় আমি শুনেছি বোটটি নাছিরকে দিয়ে মুলত কোষ্টগার্ড তৈরি করছে। কোষ্টগার্ড নিয়মিত নাছিরের বোট দিয়ে যাতায়ত ও অভিযানে যায়। বর্তমান যে বোটটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি ছোট। ছোট বোট দিয়ে অভিযানে যেতে অসুবিধা হওয়ায় কোষ্টগার্ড বড় করে এ বোটটি তৈরি করছে।
করিয়ারদিয়া ও মধ্যম উজানটিয়ার স্থানীয়রা জানায়, নাছির উদ্দিন কাঠ পাচারের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করছে ওই নাছির। কোষ্টগার্ডের অন্যতম সোর্স হওয়ার সুবাধে এসব অবৈধ হলেও তার নেই কোন সমস্যা। কোষ্টগার্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন বোট তৈরির ও বিকিকিনির ব্যবসা। উজানটিয়া ও মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে অপরাধ তৎপরতা বেড়েছে। কোষ্টগার্ডের কথা বলে নাছিরের নেতৃত্বে নানান অপতৎপরতা। নদীতে চলাচল ইঞ্জিন চালিত বোট থেকে জ্বালানী তৈল, মাছ ও মাছ ধরার জাল লুট করছেও নাছির।
এব্যাপারে বদরখালী (কোষ্টগার্ড) ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, বোটটি কোষ্টগার্ডের আর নাছির কোষ্টগার্ডের সদস্য। বোট তৈরি করলে আপনাদের অসুবিধা কি? এখানে তো আরো বোট তৈরি হচ্ছে। এগুলি দেখেন না?। একপ্রকার উত্তেজিত হয়ে বেসামাল হন ওই কর্মকর্তা। সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের একপর্যায়ে তিনি হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, এই বোট নিয়ে উল্টাপাল্টা লেখালেখি করবেন না। কোষ্টগার্ড সম্পর্কে কোন লেখালেখি করলে মেরে প্যাকেট করে ফেলব।
সংবাদকর্মী জালাল উদ্দিন জানান, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে পেশাদারিত্ব দায়িত্ব পালন করা। বোট তৈরিতে কোষ্টগার্ডের নাম এসেছে। আমি কোষ্টগার্ডের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। এর ঘন্টা পর তার মুঠোফোন (০১৭৬৬৬৯০২৮০) থেকে উত্তেজিত হয়ে আমাকেসহ সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেয়। মেরে লাশ প্যাকেট করার হাকাবকা করেছেন বদরখালী ফাড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান। বিষয়টি প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। তার হুমকির ভয়েস রেকর্ড আমার হাতে রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব। একজন সরকারি চাকুরিজীবি হয়ে এধরনের উক্তি তিনি করতে পারেন না।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ বলেন, নৌ পুলিশ ফাঁড়ি আমি দেখভাল করিনা। এসব বিষয় নিয়ে এদের অথরিটির সাথে কথা বলুন। এরপরেও হুমকির বিষয় হলে পুলিশ সহযোগিতা করবে।
পাঠকের মতামত: