ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ধান কাড়ি মাইয়া পোয়া বিয়া দিয়ুম

ওওওওসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও :::

ক্ষেতে বাতাসে দুলছে ধানের যৌবন, ঘরে ঘরে তুলছে যুবতীর পিতা-মাতার মন ‘অচেনা এই গান শুনে তাকাতেই চোখে পড়ল জমির ধান কাটতে কাটতে আনমনে গান গাইছেন ৪ জন ক্ষেতমজুর। পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন একজন। এত সুন্দর গানের শিল্পী কোথা থেকে আসছেন জানতে চাইতেই হাজী আলী আহমদ জানান, বুঝলেন স্যার ? এটা ক্ষেত মজুরদের গান। কৃষক কানি ১২ হাজার টাকা খরচ করে ধান আবাদ করে বিক্রি করছে ৭/৮ হাজার টাকায়। কানিতে ৩/৪ হাজার টাকা লোকসান। ফলন তো ভাল, অথচ ধান বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না। দাদনের টাকা পরিশোধ করতেই সব শেষ। অথচ ঘরে ঘরে বিবাহযোগ্যা মেয়ে। কৃষকদের ধানই সব। অথচ ধানের দাম না থাকায় সর্বনাশ। ক্ষেতে ধান রেখে গ্রামের কৃষকরা অনেক স্বপ্ন বুনেন। ঘরে ধান আসলে বিক্রি করে কেউ মেয়ে বিয়ে দিবেন, কেউ ছেলের বউ, বছরের জামা-কাপড়, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার যোগান দেবেন। ধার দেনা দেবেন, স্ত্রীর সখ মেটাবেন। ধার দেনা করে কেউ দাদন ব্যবসায়ীর কাছে আগাম টাকা নিয়ে জমিতে ধান বুনছেন। ফলন হচ্ছে বাম্পার কিন্তু বাজারে ধানের দাম না থাকায় সব স্বপ্নই শেষ। একমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে জমি ভেদে ৬শ থেকে ৭শ টাকা। অথচ এলাকা ভেদে ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা। বর্তমানে একজন ক্ষেত মজুর প্রতিদিন আয় করছেন ২০ থেকে ২৫ কেজি চাল। কৃষকের কপাল পুড়ছে অথচ ক্ষেত মজুরেরা আনন্দে গান গাইছে। কৃষকের সর্বনাশ অথচ ক্ষেত মজুরের পৌষমাস। কক্সবাজার সদরে ঈদগাঁও বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে এ দৃশ্য। চোখ যেদিকে যায় সবুজ আর সবুজ। ধানে পাক ধরায় কোন কোন জমি সোনালী রূপ নিয়েছে। কোথাও ধানের আগা বের হয়েছে। সবুজের সমারোহে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ফলন হয়েছে ভাল। কৃষাণ-কিষাণীদের ঘরে ঘরে কাটা-মাড়াই চলছে। বাতাসে দুলছে পাকা-আধা পাকা ধানের শীষ। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য রবীন্দ্র নাথের সে “গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গা মাঠের পথ/আমার মন ভলায় রে” প্রতিচ্ছবি। ঈদগাঁও বাসস্টেশন থেকে আলমাছিয়া মাদ্রাসা হয়ে মাইজ পাড়া কিছুদূর যেতেই চোখ জুড়িয়ে গেল ধানের দৃশ্য দেখে। যেদিকে চোখ যায় ধান আর ধান। ছবির দৃশ্যের মত বাতাসে দুলছে সে ধান। সৌদি প্রবাসী আলী আহমদ জানালেন, আমি প্রবাসে থাকলেও গ্রামের কৃষক হিসাবে আমার স্ত্রী ক্ষেত মজুর দিয়ে ধানের চাষ করেছেন। স্ত্রী স্বামীকে দেখিয়ে বললেন, সে ধানের চাষ করতে চায়নি। এরপরও আমি করেছি। ফলন তো ভাল হয়েছে। কিন্তু দেশে এসে দেখলাম, ফলন ও হয়েছে ভাল, তবে ধানের দাম নেই। তারপরও পাকা ধান তুলছে দেশে এসেছি। তার সাথে আরো একজন সম্ভাব্য মহিলা মেম্বার প্রার্থী জানালেন, তিনিও জমিতে ধানের চাষ করেছেন। ধান উঠিয়েছেন তারও অনেক টাকা লোকসান হয়েছে, আরেকজন কৃষক বলেন, দাদন নিয়ে ধান আবাদ করে বাজারে এসে পানির দামে বিক্রি করতে হয়। নিজের জমি চাষ না করে লীজ দিয়ে দেব। “অবাজি স্বপ্ন আছিল, এবার ধান কাড়ি মায়া পোয়া বিয়া দিয়ুম, কিন্তু ন পারি।” বিবাহযোগ্যা মেয়ের মন ভাঙছে। বাবা হিসাবে এ দুঃখ রাখি কোথায়?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূল নিরবচ্ছিন্ন সেচ ও বৃষ্টির পানির সুবিধা থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১০ হাজারের বেশি কৃষক পরিবার এ ফলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। অথচ হঠাৎ করে ধানের দাম পড়ে গেছে। উৎপাদন বাম্পার হওয়ায় কৃষকের মুখে যে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছিল, ধানের দাম দেখে সে ঝিলিক হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত: