ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ আলীকদম-লামা ফাঁসিয়াখালী সড়ক

118749ae768d6ad2304b02d292affe28লামা প্রতিনিধি :::

পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম আলীকদম- লামা- ফাঁসিয়াখালী সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙন সৃষ্টি, এবং সড়ক সংলগ্ন পাহাড়গুলোতে ফাটল ধরায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এ সড়কটিতে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রিবাহী ও পণ্য বোঝাই যানবাহনসমূহ। ভাঙন কবলিত এলাকা গুলোতে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিভিন্ন সময়ে সড়কটি সংস্কার করলেও বাস্তবমুখি পরিকল্পনা এবং প্রাক্কলন তৈরির অভাবে একই স্থান প্রতিবছরই সংস্কার করতে হচ্ছে। এর ফলে সড়কটি সংস্কারে প্রতিবছরই সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় হলেও স্থানীয়রা পরিপূর্ণ সুফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও প্রাক্কলন তৈরির মাধ্যমে আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই সড়কটি সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সড়কে চলাচলকারী যাত্রিসাধারণ, যানবাহন চালক ও মালিকগণ।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া উপজেলার হাঁসের দিঘী এলাকা থেকে দুর্গম পাহাড়ের মধ্য দিয়ে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সৃষ্ট প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়ক। লামা ও আলীকদম উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বমু-বিলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চকরিয়াসহ দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে সড়ক যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম এ সড়ক। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ান কর্তৃক সড়কটি নির্মাণের পর বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিকট সড়কটি হস্তান্তরীত হওয়ার পর থেকেই সড়কের বেহলাদশা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পনাহীন প্রাক্কলন তৈরি করে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণের মধ্য দিয়ে সড়কটি সংস্কার করা হলেও সে সব সংস্কার টিকসই হয়নি। সড়কের বিভিন্ন ভাঙন কবলিত স্থান প্রতিবছরই মেরাতমত করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাস্তবমুখী ও পরিকল্পনাহীন প্রাক্কলন তৈরির মাধ্যমে সড়ক সংস্কারের নামে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারের অর্থ অপচয় করছে মাত্র। পুরো সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিস্কাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার এবং নতুন করে তৈরি না করায় বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণের পানি যথাস্থান দিয়ে নিষ্কাসন হতে পারেনা। এতে করে সড়কের দশটির অধিক স্থানে বিশাল আকারের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সড়কটি দেবে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের লাইনঝিরি অংশে বৃহাদাকারের ভাঙন সৃষ্টি হলে তা দীর্ঘ দিনেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে ভাঙনটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইয়াংছা ও কুমারী এলাকার মধ্যবর্তী সড়ক সংলগ্ন স্থানে বৃহাদাকারের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় আরো দশটির অধিক ভাঙন কবলিত এলাকা রয়েছে। সড়কের মিরিঞ্জা এলাকার ভাঙন সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও অল্প দিনের ব্যবধানে একই জায়গায় আবারো ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠার সম্ভবনা রয়েছে। মূল সড়কের পাশের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় বিপরীতমুখী যানবাহন একটি অপরটিকে সাইড দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় মোটরসাইকেল আরোহীসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনগুলো এ সকল গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।

অপরদিকে সড়কের দুইটি বেইলি ব্রীজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কুমারী বেইলি ব্রীজটি নড়-বড়ে অবস্থায়এক পর্যায়ে বাঁকা হয়ে এদিকে হেলে পড়লে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কোন ভাবে জোড়া-তালি দিয়ে তা মেরামত করে দেয়া হয়। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ এই বেইলি ব্রীজ দিয়ে প্রতিনিয়ত গাছ-বাঁশ, পাথর বোঝাই যানবাহনসহ ভারি যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া সড়কের ইয়াংছা বাজার সংলগ্ন বেইলি ব্রিজটির উভয় পাশের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উভয় ব্রিজেরই পাটাতন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে এসকল ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ব্যবহার করছে স্থানীয় যাত্রীসাধারণ। এদিকে সড়কটিতে প্রতিনিয়ত ধারন ক্ষমতার ৩ গুণ বেশি পাথর, গাছ-বাঁশ, এবং তামাকসহ বিভিন্ন পন্য বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। অতিরিক্ত এসব ভারি যানবাহন চলাচল করাকেও সড়কের বর্তমান বেহালদশার জন্য দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের লামা পৌর এলাকার লাইনঝিরিস্থ কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয় যায়নি। জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবমুখী প্রাক্কলন তৈরির মাধ্যমে আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের বিভিন্ন অংশের ভাঙন স্থায়ী মেরামত, বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সড়কটির উভয় পাশে ৩ ফুট করে বর্ধিত করণ এবং বেইলি ব্রিজ সমূহের পরিবর্তে গার্ডার ব্রিজ স্থাপন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: