ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন শিগগির

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে চলেছে খুব শিগগির। বর্তমান ‘বিশাল বহর’ এর জেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে যেকোন সময়। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান অন্তকোন্দল, কয়েকজন নেতার কিছু দায়সারা ও বিতর্কিত কার্যক্রম, মাঠের আন্দোলনে নেতাকর্মীরা সন্তোষজনক ভূমিকা রাখতে না পারায় বর্তমান নেতৃত্বের উপর নাখোশ কেন্দ্র।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের ১২ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ১ জুলাই। তখন সাত সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। সৈয়দ আহমদ ও হাবিব উল্লাহের নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ ১২ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেন দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ। কমিটিতে রাশেদুল হককে সভাপতি, সরওয়ার রোমনকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, আবদুর রউফকে সহসভাপতি ও মনির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর আরও দুই বছর তিন মাস পর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তাও বিশাল বহরের ৪১৩ জনের। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটি হওয়ার কথা ৮১ জনের। এরপরও অসন্তোষ দেখা দেয় জেলা কমিটি নিয়ে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে পদত্যাগও করেন ছয়জন। তাঁদের অনেকে এটাকে ‘খুশি কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তখন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলেন, ঘোষিত কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী, মাছ ব্যবসায়ী, পানের দোকানদারদের রাখা হয়েছে। এমনকি দলীয় কর্মকান্ডে একদিনও যুক্ত ছিলনা এমন লোকদেরও পদবী দিয়ে ‘সম্মানিত’ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের তৃণমূলের কয়েজন কর্মী জানান, নতুন কমিটি ঘোষনার পর নেতাকর্মীদের একাংশের মাঝে যে বিতর্ক ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল, সময় গড়ানোর সাথে সাথে তা ক্রমশ আরও দানা বেঁধেছে। বেড়েছে নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্ব। অনেক ক্ষেত্রে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি অতীতের মত সংগঠিত নয়। মাঠের আন্দোলনে তারা খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
গত ৫ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে ২৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান কমিটিগুলোর অনুমোদন দেন। এসব কমিটি গঠনের পর দলটির দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার জেলা শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরুর আভাস পাওয়া যায় কেন্দ্র থেকে।
সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে পদ প্রত্যাশীদের অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে তৎপর হতে দেখা যায়। তারা সেখানে নিজেদের নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরছেন। কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা পাশাপাশি তারা যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন কেন্দ্রের সাথে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সম্ভাব্য সকলের নামের তালিকা পৌঁছানো হয়েছে কেন্দ্রে। যাচাই-বাছাইয়ের পর নতুন করে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হতে পারে। খুব শিগগিরই এ ঘোষনা আসতে পারে।
নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোন বার্তা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্র চাইলে জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে কোন বার্তা দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে প্রতিনিয়তই আমরা যোগাযোগ রক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি অত্যন্ত সুসংগঠিত। দলের প্রয়োজনে-দেশের প্রয়োজনে যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থেকেছি। ভবিষ্যতেও এর ধারবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব যদি পরিবর্তনও হয়, সেক্ষেত্রে আমরা অতীতে যেমন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলামÑভবিষ্যতেও সেভাবে যুক্ত থাকবো।’

পাঠকের মতামত: