এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ৩ মে ॥
কক্সবাজার পর্যটন শহরের বিশাল বৈদ্যুতিক পণ্যের মার্কেট বিলকিসে নকল ও নিম্নমানের সামগ্রী ওপেন সিেিক্রটে বিক্রি হচ্ছে। এসব মোবাইল সেটসহ নকল বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ। অসাধু চক্র সাধারণ ক্রেতাদের ঠকানোর পাশাপাশি প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। মাঝে ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতার কারণে নকল বাণিজ্যে কিছুটা ভাটার সৃষ্টি হলেও বর্তমানে তা ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ বিলকিস মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর খুচরা ও পাইকারী সহস্রাধিক দোকান ও মার্কেট রয়েছে। বিশেষ করে বিলকিস মার্কেটের কক্সবাজার মোবাইল-২ নামের একটি দোকান রয়েছে সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে যতসব দুই নাম্বার মোবাইল ফোন সেট, চার্জারসহ মোবাইল সামগ্রী। এই দোকানের মালিক চট্টগ্রাম আমিরাবাদের বাসিন্দা সামশুল আলম নামেও ওই ব্যক্তি সরাসরি চায়না থেকে নকল স্যামসাং, নোকিয়াসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের নকল মোবাইল ফোন সেট, ব্যাটারী ও মোবাইল সামগ্রী বিক্রি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া পুরো কক্সবাজার জেলায় নকল মোবাইল সেট ও মোবাইল সামগ্রী এই দোকান থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নকল মোবাইল কিনে প্রতিনিয়ত ওই দোকানির সাথে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা, হাতাহাতির মতো ঘটনা লেগেই থাকে।
বিলকিস মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই দুই নাম্বার দোকানের অধিকাংশ সামগ্রীই নিম্নমানের, নকল ও ভেজাল। নামী দামী ব্রান্ডের মোবাইল সেট হুবহু নকল করে সাধারণ জনগণকে ঠকানো হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, সব জায়গায়ই নকল-ভেজাল সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে বিলকিস মার্কেটের ওই দোকানটি নকলের জন্য কুখ্যাত। এখানে হরহামেশাই বিখ্যাত কোম্পানির নকল মোবাইল ফোন সেট, মোমোরি কার্ড বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা এসব মোবাইল ফোন কিনে ব্যবহারের পর স্বল্প সময়ে নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তা অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একইভাবে গণহারে নকল হচ্ছে মোবাইল ফোন চার্জার ও মোবাইল ফোন সামগ্রী। এগুলোর আয়ুষ্কাল খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রে এসব মোবাইল ফোন ও চার্জার নষ্ঠ হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।
ওই মার্কেটের আরেকজন জানান, বিলকিস মার্কেট সহ জেলার আরো বিভিন্ন স্থানে একাধিক নকল নকল মোবাইল ফোন সেট, মোমোরি কার্ডসহ মোবাইল সামগ্রী বিক্রির দোকান রয়েছে। এখানে স্যামসাং, নোকিয়া, সিমপুরিসহ বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানির নকল মোবাইল ফোন সেট, ব্যাটারী, চার্জার ও মোমোরি কার্ড বাজারজাত করা হয়। নিখুঁতভাবে তৈরি এসব সামগ্রী আসল না নকল তা নির্ণয় করা ব্যবসায়ীদের পক্ষেও অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।
মোবাইল ফোন সেট, ব্যাটারী, চার্জার, মেমোরী কার্ডসহ মোবাইল সামগ্রী বিক্রির বিশাল মার্কেটটি হচ্ছে প্রধান সড়কের বিলকিস মার্কেট। কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ এখানে প্রতিদিন ছুটে আসেন। আসল- নকল না চেনায় অধিকাংশ ক্রেতা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এখানে। প্রতারিতদের কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এখানে।
কক্সবাজার সদরের ঈদগাও এলাকার রাজমিস্ত্রি রফিক, কাঠমিস্ত্রি আবু তাহের ও শহরের বাহারছড়া এলাকার মাহবুব জানান, এক সপ্তাহ আগে বিলকিস মার্কেটের কক্সবাজার মোবাইল-২ দোকান থেকে বিখ্যাত স্যামসাং কোম্পানির তিনটি মোবাইল ফোন সেট কিনেছেন ৪, ৫ ও ৬ হাজার টাকায়। এক ঘন্টা ব্যবহারের পরই সেটগুলো অকেজু হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রামু এলাকার এক কলেজ ছাত্রী নোকিয়া মোবাইল ফোন সেট কিনতে এসে বিপাকে পড়েন। এক বছরের ওয়ারেন্টির কথা বলে একটি সেট বিক্রি করতে চাইলে তা ধরা পড়ে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিস্থিতি হাতাহাতির পর্যায়ে গড়ায়। পরে ব্যবসায়ি এক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
অভিন্ন অভিযোগ করেন, চকরিয়া ভেওলার আরাফাত উদ্দিন। তিনি ১ মাস ঘুরেও তার অকেজো মোবাইল সেটটি ঠিক করতে পারছেন না। এক বছরের গ্যারান্টি থাকা সত্ত্বেও নতুন সেট দেয় নাই। তবে দিচ্ছি দেবো করে তাকে গত এক মাস ধরে তাকে ঘুরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কক্সবাজার মোবাইল-২ এর মালিক সামশুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাম্প্রতিককালে নকল ও ভেজালের প্রবণতা বেড়েছে। নকল-ভেজাল প্রতিরোধে ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আরো জোরদার করা দরকার।
অপর এক পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার শহরে নকল মোবাইল ফোন সেট, ব্যাটারী ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর বিরাট আখড়া রয়েছে। নকল ও ভেজাল দ্রব্যসামগ্রী ধ্বংস করতে না পারলে দেশীয় স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়বে। তিনি আরো বলেন, নকল লেবেল লাগিয়ে নানা কোম্পানির নামে চালানো হচ্ছে। চায়না থেকে আমদানি করা অতি হালকা নিম্নমানের মোবাইল ফোন সেট দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় এবং মূল্য কমের কারণে ক্রেতারা তা কিনে ঠকছেন। এভাবে প্রতি বছর সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠি সীমাহীন দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
পাঠকের মতামত: