নাছির উদ্দীন পিন্টু, ঈদগাঁও প্রতিনিধি :::
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও শিয়াপাড়া ও বৃহত্তর ঈদগাঁও জুড়ে চলছে পাহাড় কাটা, বনজ সম্পদ নিধন ও অবৈধ দখলের মহোৎসব। স্ব স্ব এলাকার বনবিভাগ রাষ্ট্রের এ মুল্যবান সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে নেমেছে অসদুপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায়। দিন রাত প্রকাশ্যে পরিবেশ ও বনজ সম্পদ বিধ্বংসী এ অপকর্ম চলতে থাকলেও রহস্যজনক কারণে নির্বিকার রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর বনবিভাগের মেহেরঘোনা বনবিট, কালিরছড়া বনবিট, ভোমরিয়াঘোনা বনবিট, ধলিরছড়া বনবিট, রাজঘাট বনবিট, নাপিতখালী বনবিট ও ফুলছড়ি বনবিটের অধীন হাজার হাজার একর বনবিভাগের জায়গা বনবিটের কর্মকর্তা ও জায়গীরদারদের যোগসাজশে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে দখল করে তাতে গড়ে তুলেছে বহুতল বিশিষ্ট পাকা দালন ও কাঁচা ঘরবাড়ি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বনের পাহাড় কেটে প্রতি গাড়ী মাটি বিক্রি করে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এছাড়া পাহাড়ী বিভিন্ন ছড়া, খাল ও নদীতে বনবিভাগকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমনকি মহাসড়ক সংলগ্ন বনবিভাগের কোটি কোটি টাকার জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা সরেজমিনে পরিদর্শন করলে বেরিয়ে আসবে।
অপরদিকে চলতি শীত মৌসুমে বৃহত্তর ঈদগাঁও ও পাশর্^বর্তী এলাকার ডজনাধিক ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য উক্ত বনবিট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সংরক্ষিত অবশিষ্ট বনাঞ্চলের ছোট বড় মূল্যবান গাছ কেটে লাকড়ি বানিয়ে দালালরা ঐসব ইট ভাটায় আগাম পাচারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিশেষ করে সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে সামাজিক বনায়নে যেসব কাঠ কেটে নিচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই এসব বনবিটের নির্দিষ্ট কিছু রাস্তা দিয়ে ড্যাম্পার, চান্দেরগাড়ী যোগে কাঠ ও লাকড়ি পাচারের মহোৎসব চলছে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন এসব কাঠ পাচারকারী এবং দখলবাজদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা হাতিয়ে নেয়। পরিবেশ বিধ্বংসী পাহাড় কাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মহাসড়কের পাশর্^বর্তী মূল্যবান জায়গাগুলো দখল করে রাতারাতি পাহাড় কেটে প্রশাসন ও বনবিভাগকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রকাশ্য দিবালোকে এসব চললেও বনরক্ষকরূপী কর্মকর্তারা অবৈধ টাকা উপার্জনের নেশায় ভক্ষক হয়ে উঠাতে ভূমিদস্যু কাঠ পাচারকারী ও দখলবাজরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঈদগাঁও শিয়াপাড়াতে ৩১ ডিসেম্বর গিয়ে দেখা যায় যে, কোনার পাড়ার মৃত শুক্কুরের পুত্র নাছির ও কানিয়াছড়ার মৃত মমতাজের পুত্র নুুরুল হক ড্রাইভারের নেতৃত্বে ৮/১০জন লোক নিয়ে পাহাড় কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে ভোমরিয়াঘোনার রেইঞ্জার আবদুল মতিনের নির্দেশে বিট অফিসারের নেতৃত্বে একদল স্টাফ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাহাড় কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এলাকার সচেতন মহলের দাবী, এ পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাবে সরকারী বনজ সম্পদ এবং পরিবেশ হয়ে পড়বে ভারসাম্যহীন। তাই পাহাড় কর্তনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান এলাকাবাসী।
পাঠকের মতামত: