ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁওর টেক-বাঁক মরণ ফাঁদ, পশুর হাট ষ্টেশনে ষ্টেশনে নিত্য জট!

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::

ককসবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও এলাকার টেক-বাঁক পর্যটকদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোথাও ডানে মোড়, আঁকাবাঁকা রাস্তা বা সতর্কীকরণ চিহ্ন না থাকায় প্রতিনিয়ত এসব এলাকায় দ্রুতগামী চেয়ারকোচ ও মালবাহী ট্রাক দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতে করে ঘটছে বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা।

কোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছ, ককসবাজার বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় মহাসড়কে ছোটবড় প্রায় ২০টি টেক-বাঁক রয়েছে। তৎমধ্যে অন্যতম মেহের ঘোনা, ঢালার দোয়ার ও নাপিতখালীর ড্যাঞ্জার জোন খ্যাত বাঁক। দুর থেকে এসব স্থানে টেক-বাঁকগুলি দেখা না যাওয়ার কারণে এ সকল টেক-বাঁকে যানবাহন দূর্ঘটনার আশংকা করছেন চট্টগ্রাম-ককসবাজারমূখী চেয়ারকোচ ও ট্রাকের একাধিক ড্রাইভার। তাছাড়া মহাসড়কে অসংখ্য বাঁকের পাশাপাশি ৬টির অধিক হাটবাজার থাকায় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কালির ছড়া বাজার, মেহের ঘোনা কমিউনিটি সেন্টার, কলেজ গেইট, ঈদগাঁও বাসষ্টেশন, তেতুলতলা ফকিরা বাজার, নাপিতখালী বটতল ও নতুন অফিস বাজার অন্যতম। এসব ষ্টেশন ও বাজারে অবৈধ ভাবে জীপ, মাইক্রো ও টেক্সী দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হয়। এতে করে পর্যটকদের ঘন্টার পর ঘন্টা মহাসড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ককসবাজার পৌঁছতে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উল্লেখিত টেক-বাঁকে প্রতিবছরে অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দূর্ঘটনা টেক বা বাঁকে অতিক্রম করার সময়। প্রশাসন সূত্রে জানায়, এসব টেক-বাঁকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞাপন টাংগিয়ে ছিল। কিন্তু চোরের দল রাতের আধাঁরে কেটে তা বিক্রি করে দিয়েছে। তাছাড়া স্ব স্ব এলাকায় প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দোকানপাট উচ্ছেদও করেন। এসময় দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে দখলদারেরা আবারো দোকানপাট ও হাটবাজার গড়ে তুলে। ফলে সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছেনা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ককসবাজার মহাসড়কের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক হিসাবে পরিচিতি পেলে টেক-বাঁক খানা খন্দক ও ষ্টেশন ভিত্তিক অবৈধ বাজার এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশের কোন কাজ করা হচ্ছেনা। মহাসড়ক দিয়ে বেশি ওজনের ট্রাক, লরি নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে মহাসড়কের ঈদগাঁওর অনেকাংশে দেবে গেছে।

মারছা চেয়ারকোচের ড্রাইভার ছৈয়দ আলম জানান,নাপিতখালী মোড়ের বাঁকটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে বাঁকে আসলে গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। যার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে ঈদগাঁও বাস ষ্টেশনের মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিক্সা ষ্টেশন। যার কারনে প্রতিদিন যানজট ও দূর্ঘটনা লেগেই আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অটোরিক্সা সিএনজি সমিতির নামে সড়ক দখল করে সিএনজি গাড়ির ষ্টেশন গড়ে তোলে। এ সুযোগে অটোরিক্সা থেকে হর হামেশা আদায় করা হচ্ছে চাঁদা।

ষ্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছর পূর্ব থেকে সিএনজি সমিতি এ ষ্টেশন গড়ে তোলে। যা কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও বাস ষ্টেশনের পশ্চিম পার্শে গড়ে তোলা হয়। এসব স্থানে স্থানীয় পুলিশ ১০টি সিএনজি অটোরিক্সা রাখার বিধান করে দিলেও তা তোয়াক্কা না করে দৈনিক অর্ধশতাধিক সিএনজি অটো রিক্সা থামিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও গত ১ বছর ধরে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিল লাইন সার্ভিস ষ্টেশন ও গড়ে তোলা হয় এ ষ্টেশনের পাশে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, বাজারের ডিসি সড়কের মুখের ডান পাশ থেকে ঈদগাঁও নদীর ব্রীজের দক্ষিন পাশ পর্যন্ত এসব গাড়ির ষ্টেশনের দখলে চলে গেছে। এতে করে পর্যটকবাহি কক্সবাজারগামী বাস যানজটের কবলে পড়ে নাকাল হতে হয় যাত্রী সাধারণের।

দেখা গেছে, ডিসি সড়কের বাজারে নামার মুখে ডান পাশে রিক্সা, সিএনজি ও বাম পাশে রয়েছে সারি সারি রিক্সা। অন্যদিকে ঈদগড় সড়কের মাথায় রিক্সা, যাত্রী চাউনি এলাকায় জীপগাড়ি ও ষ্টেশনের পূর্বপাশে রয়েছে মাইক্রো ষ্টেশন। ফলে দফে দফে যানজট নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বাস ষ্টেশনে।

এদিকে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একজন আনসার সার্বক্ষনিক যানজট নিরসনে কর্তব্যরত থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় তা একার পক্ষে সামাল দেয়া যাচ্ছে না।

জীপ চালকদের অভিযোগ, প্রতিমাসে টুকেন নিয়ে ষ্টেশনে গাড়ি রাখা হয়। এরপরও নানা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ জানান, সড়কের উপর অবৈধ সিএনজি আটোরিক্সা ষ্টেশন গড়ে তুলার ব্যাপারে একাধিক বার নিষেধ করা হয়েছে। আর নাম্বার বিহীন সিএনজি চলাচলের বিষয়ে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। এসব কিছু দেখে ট্রাফিক পুলিশ।

ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ভুঁইয়া জানান, সড়কের উপর থেকে অনেকবার সিএনজি অটোরিক্সা সরানো হয়েছে। কিন্তু চালকরা বেপরোয়া ভাবে আবার রাখে। যার কারণে ষ্টেশনে যানজট হয়।

এদিকে মহাসড়কের ঈদগাঁও গরুবাজার কক্সবাজারগামী পর্যটকদের দূর্ভোগ দিনদিন বাড়ছে। সপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার হাট বসায় উক্ত দিনগুলোতে ঈদগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী পোকখালী, চৌফলদন্ডী, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, খুটাখালী, ভারুয়াখালী ইউনিয়নগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো গরু বেচাকেনার জন্য ঈদগাঁও স্টেশন সংলগ্ন মহাসড়কের উভয় পাশের হাটে চলে আসে। উক্ত দিনগুলোতে মহাসড়কের উভয় পাশে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গরু বেচা কেনা। অসংখ্য গরু রাস্তার উভয় পাশে দাঁড় করানোর ফলে চলাচলের জায়গা থাকেনা। যার কারণে গর ক্রেতা ও সাধারণ মানুষগুলো মহাসড়কের উপর দিয়ে চলাচল করে। এতে মহাসড়কে ব্যাপক যানজট ঘটে। ফলে কক্সবাজারগামী পর্যটকদের গাড়ী আটকে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। দূর্ঘটনার আশংকায় ড্রাইভাররা আস্তে গাড়ী চলানোর কারণে যাত্রীরা সময় বিড়ম্বনার মত ঝামেলায় পতিত হয়। অধিকাংশ সময় এম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের মত গাড়ীও আটকে পড়ে গরুর হাটে।

পাঠকের মতামত: