নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: কক্সবাজার জেলার ৮উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা। বিদ্যমান ১১১ টি ইটভাটার ৬৮ টিই অনুমোদনহীন। পরিপূর্ণ বৈধতা আছে মাত্র ৪৩ টি ইটভাটার। তাহলে ৬৮ টি অবৈধ ইট ভাটা এতদিন পর্যন্ত চলে আসছে কিভাবে এটাই প্রশ্ন জেলার সচেতন মহলের। নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে কমছে চাষাবাদের জমি। এছাড়া, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে কমছে গাছ। ফলে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে কক্সবাজারের ৬১.২৬ শতাংশ ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। যদিও উচ্চ আদালতে রীট করে কিছু কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে চলছে এ সব ইটভাটা।
পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ি সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর এলাকায়ও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অন্যদিকে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল হিসেবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ নাজমুল হুদা জানান, কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় ১১১টির মত ইটভাটা আছে। এর মধ্যে ৬১.২৬ শতাংশের পরিবেশের ছাড়পত্র ও অনুমোদন নেই। আছে মাত্র ৩৮.৭৩ শতাংশের পরিবেশগত ছাড়পত্র । জেলায় অবৈধ ও বৈধ ইট ভাটার পরিসংখ্যান হলো কক্সবাজার সদরে ১৯টির মধ্যে বৈধ মাত্র ৩টি, অবৈধ ১৬ টি। রামুর ৫২টির মধ্যে বৈধ ২৩টি অবৈধ ২৯ টি। পেকুয়ার ৬টির মধ্যে বৈধ মাত্র ১ টি, অবৈধ ৫টি। চকরিয়ার ৯টির মধ্যে ৯টিই অবৈধ। উখিয়ার ১১ টির মধ্যে অবৈধ ৬ টি বৈধ ৫ টি। টেকনাফের ১২ টির মধ্যে ৯ টি বৈধ এবং অবৈধ ৩ টি।
অপরদিকে জেলায় মোট ৬৮ টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই জানিয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন – জেলায় যে ইটভাটাগুলোর বৈধতা আছে সেখানে অনেক ভাটা মালিক তা আপডেট রাখেনি। আবার অনেকে নীতিমালার বাইরে এসে কার্যক্রম চালাচ্ছে নিজেদের ইচেছ মত করে। আবার অনেক ইটভাটার চিমনি এখনও উন্নত প্রযুক্তিতে রুপান্তর করা হয়নি।
এদিকে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও অতিরিক্তি মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। কাঠ ব্যবহারের ফলে গাছের সংখ্যা কমছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ আইন অমান্য গড়ে উঠা এসব ইটভাটার কারণে কমে যাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য, কৃষি জমি ও উজাড় হচ্ছে বিশাল বনভূমি।
ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বয়স্ক ও শিশুরা। ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে গাছের ফল ও পাখির আবাস।
এদিকে চিমনি বিশিষ্ট ভাটা ২০০১ সাল থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বেশির ভাগ ড্রাম চিমনি বিশিষ্ট ভাটা রয়েছে রামু, চকরিয়া এবং উখিয়ায়। এগুলো নির্মান করা হয়েছে নদীর কাছে, উপকুল, পাহাড়ের ভেতর ও জনবহুল এলাকায়। এসব ভাটায় জমির উপর স্তরের মাটি ব্যবহার করায় জমির উর্বিরা শক্তি হ্রাস পচ্ছে, কমছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না। ফসলি জমির মাটির উপরি অংশ কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমির ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকাংশে কমে যাবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, অনেক ভাটায় মামলার কারণে মূলত আমরা অভিযান চালাতে পারছিনা। ভাটার মালিকরা ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা প্রস্তুত আইনে হাইকোর্টে একটি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রায় ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাটা চিহ্নিত করে আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে।
কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আগামি প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধ জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলার পরিবেশবাদী সচেতন মহল।
পাঠকের মতামত: