ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সড়কের অভাবে বিপর্যস্ত শুটকি ব্যবসা

আইরিন আকতার, কক্সবাজার :::: ayrin-news-pic
বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শুটকি মহাল কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি মহাল।  বছরে প্রায় ১শ’ ৩০ কোটি  টাকার লেনদেন হয় এ শুটকি মহালে। যার থেকে সরকারও পাচ্ছে রাজস্বের একটি বিরাট অংশ। অথচ একটি এক কিলোমিটারের সড়কের অভাবে বিপর্যস্ত এ শুটকি ব্যবসা। লোকসান গুনতে হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
নাজিরারটেক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি মোঃ আমান উললাহ জানান, ১শ’ ২০ একর জায়গাজুড়ে নাজিরারটেক শুটকি মহালে  ৭শ’ চাতালে (আড়তে) প্রায় ১২শ’  ব্যবসায়ির অধিনে সাড়ে ৩ শ’  ট্রলারে ও চর এলাকায় কাজ করে প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক। শুকনো মৌসুমে বাহির থেকেও আরো প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের আগমন ঘটে এ শুটকি পল্লীতে।
অথচ মাত্র এক কিলোমিটার একটি সড়কের অভাবে প্রতিদিন জোয়ার ভাটার উপর র্নিভর করেই শুটকি পরিবহনের কাজ পরিচালনা করতে হয় ব্যবসায়িদের। যেসময় জোয়ার আসে পুরো কাঁচা সড়কটি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তখন আর কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ থাকেনা। মানুষ যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে ছোট ছোট নৌকা। তাও হাতে গোনা দু’ একটা মাত্র। নৌকা না পেলে কোমর পানিতে কাঁদা-পানিতে মাখামাখি করেই শহরমুখি হতে হয় তাদের। অথচ একটি সড়কই পাল্টে দিতে পারে এ চিত্র। এনে দিতে পারে কক্সবাজারের শুটকি ব্যবসায় প্রান। ব্যবসায়িরা আয় করতে পারে ২ গুন বেশি ।
নাজিরারটেক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি মোঃ আমান উললাহ বলেন “ এখন আধুনিক যুগ অথচ আজও আমাদের জোয়ার-ভাটার উপর র্র্নিভর করেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। জোয়ার আসলে আমাদের কাঁচা সড়ক কাঁদা পানিতে তলিয়ে যায়। তাই জোয়ার আসার আগেরই আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজ সেরে নিতে হয়। কোন কারনে কখনো দেরি হয়ে গেলে দেখা যায় সেদিন আর আমরা এ পল্লীর বাইরে যেতে পারিনা। অর্থাৎ সারাটা দিনই আমাদের লোকসানের উপর দিয়ে যায়। এ পল্লীর ৭শ’ ব্যবসায়ির একই অবস্থা।”
শুটকি ব্যবসায়ি কায়সার আহমেদ বলেন “ অনেক সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় ব্যবসায়িরা ফোন করে আসতে চায়। কিন্তু সড়কে কোমর পানি দেখে তারা অনেক সময় ফিরে যায়। টুরিস্টদের আগ্রহ থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় তারা আসতে পারেনা।”
এ ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর হুমাইরা বেগম বলেন “ এ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সত্যিই নাজুক। আমরা বার বার এ এলাকার সড়কটির কথা বৈঠকে উত্থাপনের চেস্টা চালাচ্ছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এ বিষয়ে  ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আকতার কামাল বলেন, “এ বিষয়ে বৈঠকে অনেকবার আলাপ করেছি। এক কিলোমিটারের একটা সড়কও করা হয়েছে। কিস্তু দুঃখের বিষয় সরকারের বড় প্রকল্পগুলো আমাদের দেয়া হয়না। প্রকল্প পেলে আরো এক কিলোমিটারের সড়ক আমরা র্নিমান করবো।”
এ বিষয়ে জেলা মৎস কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন “নাজিরার টেক শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা পৃথিবীর একটি বৃহৎ শুটকী পল্লী। ওষুধবিহীন শুটকী উৎপাদনেও এ পল্লীর ব্যবসায়িরা সফলতা দেখিয়েছেন। এ এলাকার শুটকী শুধু দেশের বিভিন্ন স্থানেই নয় বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। এর থেকে সরকারও বিপুল টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ এলাকাটি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে । যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এ ব্যবসার পরিধি আরো বিস্মৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।” দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: