ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সড়ক নির্মাণ-সংস্কার কাজে প্রযুক্তি দূর্বলতায় বছরে হাজার-হাজার কোটি টাকা অপচয়

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা ::  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের অধিনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন দেশের ৬৫টি সড়ক বিভাগে প্রযুক্তি দূর্বলতার কারণে বছরে হাজার-হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে সড়ক-মহাসড়ক গুলো নির্মিত ও সংস্কার হওয়ায় বছর শেষ না হতেই ওইসব সড়ক গুলো ভেঙ্গে ও খানা খন্দক সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে সড়ক মজবুতিকরণ, মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, কার্পেটিং ও সীলকোট, ডিবিএসটি ও ওভারলে পদ্ধতির মাধ্যমে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এ’কাজে সিডিউল বর্হিভূত নিন্মমানের বিটুমিন ও পাথরের ব্যবহারের কারণে সড়ক টেকসই হচ্ছেনা বলে বিশেজ্ঞমহল মনে করেন।

আরসিসি ঢালাই হচ্ছে, সড়কের উপরি ভাগে সিডিউল বর্ণিত লোহার রড বসিয়ে উপরে উন্নতমানের পাথরের খোয়া, সিমেন্ট ও বালু মিশ্রণের মাধ্যমে ঢালাই দিয়ে যে সড়ক নির্মিত হয় তা হচ্ছে আরসিসি ঢালাই। এসড়ক ২০/২৫ বছরের মধ্যে নষ্ট হয়না,বর্ষা ও শুস্কমৌসুমে রাস্তার ক্ষতি হয় না, সড়কের স্থায়ীত্বও দীর্ঘদিন ঠিকে। সম্প্রতি এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের এক বৈঠকে দেশের সড়ক ও মহাসড়ক গুলো পর্যায় ক্রমে আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে নির্মাণ ও সংস্কার করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিনে দেশে রয়েছে ৬৫৪টি মহাসড়ক। যার পরিধি হচ্ছে ১৩,২৪২,৩৩ কিলোমিটার। এসব সড়ক গুলো জেলা মহাসড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় বিদ্বমান রয়েছে। এসব সড়ক গুলো প্রতিবছর সংস্কার,মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নিন্মমানের প্রযুক্তির কারণে সড়ক গুলো স্থায়ীত্ব পায়না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বাধ্যতামুলক থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদাররা তা মানছেনা।

অভিযোগ রয়েছে, ৬৫টি সড়ক বিভাগের স্ব স্ব এলাকায় সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগের কাজের তদারকিতে নিয়োজিত দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থপূর্ণ উদারতায় ঠিকাদাররা নিন্মমানের বিটুমিন ও বিভিন্ন সাইজের সস্তা দরের পাথর ব্যবহারের কারণে সড়ক গুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, দেশের সড়ক গুলো সংস্কারের জন্য বিদেশ থেকে আনা নিন্মমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ড্রাম ভর্তি করে এসব নিন্মমানের বিটুমিন দেশে এনে গলিয়ে ব্যাস্কে বিক্রি করা হয়। বিগত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে বিটুমিন গলানো হতে দেখা যেত। বর্তমানে যে খানে সে খানে চুল্লি বসিয়ে বিটুমিন গলানো হতে দেখা যায়। যা’পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসন দেখে ও দেখেনা। ইরানী বিটুমিন দামে সস্তা হওয়ার কারণে বিদেশ থেকে এসব কোম্পানীর বিটুমিন ক্রয় করে ঠিকাদাররা অহরহ ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে গরম পড়লে এসব বিটুমিন গলে গিয়ে কার্পেটিং এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যায়।

ইরানী বিটুমিন দেখতে অনেকটা কালো। সেহেতু রাস্তা সংস্কার কাজে কার্পেটিংয়ের পর খুব ভাল দেখায়। এসব বিটুমিন ব্যবহারের কারণে শুস্কমৌসুমে কয়েক মাস ভাল গেলেও বর্ষাকালে গাড়ির চাকার সাথে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পড়ে এ অভিযোগ পর্যবেক্ষক মহলের। তাই তারা ভবিষ্যতে সড়ক-মহাসড়ক গুলো ঠেকসই আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন।

এতে সরকারের হাজার-হাজার কোটি টাকা অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সড়কের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাবে বহু বছর।

পাঠকের মতামত: