ডেস্ক নিউজ :
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ভিটেমাটি আর সহায়-সম্বল হারানোর ভয়ানক অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে আসা লাখো মানুষের ভিড়ে অনেকেই শিশুসন্তান ও স্বামীকে হারিয়ে ফেলছেন।
প্রতিদিন অনেক শিশু হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো শিশু বাবা-মায়ের কোলে ফিরলেও নিখোঁজ থাকছে অনেকে। সন্তানহারা বাবা-মা আর তাদের ঠিকানা না জানা শিশুরা সময় পার করছে চোখের জলে।
শুক্রবার সকালে এ রকম চোখের জলে ভেসেছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নুরুল্লাপাড়ার বাসিন্দা রাজিয়া বেগম। সন্তান হারিয়ে অনেকটা পাগলের মতো চারদিকে ছোটাছুটি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সন্তানের খোঁজ পাননি তিনি।
শনিবার আরেক মা তার সন্তান খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা। কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া এই মা জানেন না তার সন্তান কোথায় হারিয়েছে। একটু আগেও নাড়িছেঁড়া সন্তানটি তার সঙ্গেই ছিল। কিন্তু ক্যাম্পের বাইরে খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় তার সন্তান।
স্বামীকে মিয়ানমারে রেখে সন্তানকে কোলে করে গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ফাতেমা নামের এক রোহিঙ্গা নারী। সন্তান নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
রোববার দুপুরে শিশু আজিজুলকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্তানের দেখা পাননি তিনি। সন্তান হারানোর বেদনা সইতে না পেরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় গড়াগড়ি করে আহাজারি শুরু করেন এই মা।
বুক চাপড়াচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। তার আশপাশে অনেক শিশু জড়ো হলেও নিজের সন্তানকে দেখছেন না তিনি। কোনোভাবেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না। একপর্যায়ে বৃষ্টির পানিতে গড়াগড়ি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।
সন্তান হারানোর কথা জানিয়ে মংডু জেলার মাছছিল্লা পাড়ার আব্দুর রহিমের স্ত্রী খায়রুন বলেন, জীবন বাঁচাতে এদেশে চলে আসছি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে ছেলেকে নিয়ে এখানে আসি। স্বামী ওপারে থেকে গেছে। কিন্তু এখানে এসে দুদিন যেতে না যেতেই সন্তানকে হারিয়ে ফেলছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি।
স্বজন হারিয়ে বেঁচে থাকা যেন তাদের কাছে অর্থহীন। শিশু হারানোর এ ঘটনা ঘটছে অহরহ। রাস্তায় যেতে যেতেই এমন অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। যাদের পরিবারের সদস্যরা হারিয়ে গেছেন। হারিয়ে যাওয়া এই মানুষদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি বলে অনেকের দাবি।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের মায়ের সংখ্যা কম নয়। চোখের সামনে নৃশংস কায়দায় স্বজনকে হত্যা, জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে দেখেছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই ঠিক মতো খাচ্ছেন না। ত্রাণের প্রতিও তাদের কোনো আগ্রহ নেই। দুর্বিষহ জীবন নিয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের।
পাঠকের মতামত: