কক্সবাজার সংবাদদাতা :: প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ হলে স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ জীবিকা হারাবে। হুমকির সম্মুখীন হবে পর্যটনখাতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনবিবেচনার দাবী জানিয়েছে ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)।
তারা বলছে- সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমন সীমিতকরণ বা রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে পর্যটন শিল্পে নিয়োজিত ৭-৮টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, ১০০ মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ ট্যুরিস্ট গাইড এবং দ্বীপের ১২০ টি হোটেল-কটেজ ও ৭০টি রেস্তোরাঁয় কর্মরতদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে কথাগুলো উপস্থাপন করেছে পর্যটনভিত্তিক সংগঠন টুয়াক। টুয়াক সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কার্যকরী কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান মফিজ।
তিনি বলেন, সরকার ২০০৯ সালে পর্যটনকে ‘শিল্প’ ঘোষনার পর থেকে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে সম্পূর্ণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন বিকশিত হবার পূর্বে স্থানীয় জনগোষ্ঠী সমুদ্র হতে মাছ আহরণের পাশাপশি প্রবাল উত্তোলন, প্রবাল পাথরকে নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করে বিক্রি, মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস, শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে বিক্রি, কাছিমের আবাসস্থল নষ্ট করাসহ বিভিন্ন উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করত। সেন্টমাটিনে পর্যটন শিল্প বিকাশিত হওয়ার পর উক্ত জনগোষ্টি বিকল্প জীবিকায়ন হিসেবে পাওয়ায় তাদের জীবনধারায় আমুল পরিবর্তন আসে এবং তারাই পরিবেশ রক্ষায় সোচ্ছার ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা ঘোষনার পূর্বেই নির্মিত ৭/৮টি বিল্ডিং ছাড়া বাকি সব স্থাপনা সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষার উপযোগী ইকো-ট্যুরিজম ব্যবস্থাপনায় নির্মিত। গত ৬ আগস্ট জুমমিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিদিন মাত্র ১২৫০ পর্যটক সেন্টমাটিন দ্বীপ দিবাকালিন ভ্রমণ করতে পারবে কিন্তু রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। সংবাদটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনগোষ্টিকে উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত করেছে। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৭-৮টি জাহাজের মাধ্যমে ৪/৫ হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে ভ্রমণ করেন এবং এর মধ্য হতে ৩০% পর্যটক রাত্রীযাপন করেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভবিষ্যতে কি কি ক্ষতি সাধিত হতে পারে এবং উক্ত ক্ষতি মোকাবেলায় কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করে শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে পর্যটক সীমিত করে দ্বীপের কোন উপকার হবে বলে আমরা মনে করিনা বরং এই সিদ্ধান্ত দেশীয় পর্যটন শিল্প বিকাশ বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মায়ানমার বার বার তাদের মানচিত্রে প্রদর্শিত করায় আমরা দুশচিন্তায় আছি। আমরা দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই, আমরা দ্বীপবাসি এবং দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ী দ্বীপকে অনেক ভালবাসি এবং দ্বীপের পরিবেশ বিষয়ে অনেক সচেতন আছি। পর্যটন বাঁচিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশ সংরক্ষণে সরকারি যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা সার্বিক সহযোগিতায় প্রস্তুত আছি।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলেন, এমনিতেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভাবে আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতির স্বীকার হয়েছি। এখনো পর্যন্ত সরকারি বা অন্য কোন সংস্থা হতে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সহায়তা বা প্রণোদনা পাইনি। দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করলেও এখনো লগ্নীকৃত বিনিয়োগ উত্তোলনের সুযোগই আসেনি। তাই এই মুহুর্তে এ ধরণের সিদ্ধান্ত দেশীয় পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি পর্যটন নির্ভর দ্বীপবাসিরা জীবিকা হারালে আবারো পরিবেশ ধংসকারী কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টুয়াকের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান এমএ হাসিব বাদল, উপদেষ্টা কামরুল ইসলাম, সৈয়দুল হক কোম্পানি, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার কামাল, যুগ্ম সম্পাদক আল আমীন বিশ্বাস, মুনীবুর রহমান টিটু, এসএ কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক মুঃ মুকিম খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক মো. তোহা ইসলাম, ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ ইদ্রিচ আলি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আলম রনি।
পাঠকের মতামত: