ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সেই ‌‌‌‘মাইক ব্যাটারী’ এখন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী!

kutubআতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার:
চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঈদগাঁওর “নিজে মাইক নিজে ব্যাটারী” খ্যাত কুতুব উদ্দীন চৌধুরী। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তিনি।

২৪ এপ্রিল (রবিবার) দুপুরের পর কক্সবাজারে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় এ কথা জানান কুতুব উদ্দীন চৌধুরী।

এসময় তিনি বলেন, লবণ, চিংড়ি ও মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ পোকখালী ইউনিয়নের ইতিপূর্বের সব চেয়ারম্যান চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, তারা জনগনের উন্নয়নে কিছুই করেননি। রাজনৈতিক দলগুলো সব ভন্ডদের দখলে জানিয়ে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি নির্বাচিত হলে চেয়ারম্যান-মেম্বার-মহিলা মেম্বার ও উপদেষ্টা পরিষদসহ ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদ গঠন করা হবে ! নারী শিক্ষার উন্নয়নে পোকখালীতে বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন “অবিভক্ত বৃহত্তর পোকখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমার চাচা মরহুম রমজান আলী চৌধুরী দেখিয়ে গেছেন জনসেবা কিভাবে করতে হয়, সে পথ ধরেই চেয়ারম্যান হয়ে জনসেবা করব আমি”।

৯০% জনগন তাকে সমর্থন করে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “প্রচার প্রচারনার জন্য দুই সেট মাইক কয়েকদিনের মধ্যে কিনে নিজের প্রচারনা নিজেই শুরু করব”। ২০১৩ সালের মার্চে ঈদগাঁও বাজারের অসাধু হোটেল মালিকরা অযৌক্তিকভাবে চায়ের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে এর বিরূদ্ধে “চা আন্দোলন” গড়ে তুলেন সাংস্কৃতিক কর্মী কুতুব উদ্দীন চৌধুরী। তখন চায়ের দাম না বাড়াতে বাধ্য হন হোটেল মালিকরা। রাইচ মিল মালিকরা ধান মিলিং চার্জ বাড়িয়ে দিলে প্রান্তিক কৃষকদের নিয় “ধান-চাল আন্দোলন” গড়ে তুলেন তিনি। এর আগে “রত্নপ্রসবিনী মা সম্মাননা অনুষ্ঠান”ও করেন নিজ অর্থায়নে।

২০১৪ সালের এপ্রিলে ঈদগাঁও বাজারের জলাবদ্ধতা, যানজট, লোডশেডিং এবং অন্যান্য নাগরিক সমস্যার ব্যপারে নিউ মার্কেট চত্বরে “ডিজিটাল ঈদগাঁও চাই” শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন তিনি। উক্ত অনুষ্ঠানে জেলার রাজনীতিক, সাংসদ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সেলিব্রিটি উপস্হিত থাকবেন বলে নিজেই কয়েকদিন ধরে মাইকিং করেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সন্ধ্যায় অতিথিরা কেউ না আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের বক্তব্য নিজেই শুরু করেন তিনি।

বক্তৃতার একপর্যায়ে লোডশেডিং শুরু হলে তিনি মাইকে বলেন, “এই পল্লী বিদ্যুৎ, তুমি কার ইশারায় চলে গেছ, তা তোমাকে বলতে হবে”। এসময় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে বদলী করারও আল্টিমেটাম দেন কুতুবউদ্দীন। বাজারের বিরাজমান সমস্যা সমাধান না হলে সরকারী বিভিন্ন দপ্তর ঘেরাও করার ঘোষনাও দেন। বক্তৃতার মাঝে মাঝে দৌড়ে গিয়ে মাইক ঠিক আছে কিনা দেখে আসেন তিনি। বক্তৃতার একপর্যায়ে মাইক রেখে খালি গলায় বক্তব্য দিতে দিতে বলেন, কে যেন শয়তানী করে মাইকের তার কেটে দিয়েছে।

এভাবে ঘন্টাদুয়েক বিভিন্ন পাগলামী করে বাজারবাসীর হাসির খোরাক জুগিয়ে হঠাৎ বক্তব্য বন্ধ করে দিয়ে মাইক ব্যাটারী, চেয়ার টেবিল ও শামিয়ানা নিজে নিজেই গুটিয়ে নিয়ে চলে যান কুতুব চৌধুরী। তার এসব হাস্যকর কর্মকান্ড “নিজে মাইক নিজে ব্যাটারী” শিরোনামে পরদিন কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এ প্রকাশিত হয়। এরপর “নিজে মাইক নিজে ব্যাটারী” নামে দেশে বিদেশে রাতারাতি পরিচিতি পান তিনি। পোকখালীর বনেদী জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া কুতুব উদ্দীন চৌধুরী নিজের নির্বাচনী সংগীত নিজেই রচনা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তার প্রার্থীতার খবর “নেটে” (অনলাইনে) প্রকাশ করার অনুরোধ জানান।

তার মতে, অনলাইন সাংবাদিকতাই আগামী দিনের একমাত্র সংবাদ মাধ্যম। কারন, সিবিএন’র মত জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের কল্যাণেই দেশ বিদেশে তার এত পরিচিতি। ভোট না পেলে কি করবেন এমন প্রশ্নে “পরাজয়ে ডরেনা বীর” বলে স্হান ত্যাগ করেন ঈদগাঁওর পরিচিতমুখ অকৃতদার কুতুব উদ্দীন চৌধুরী (৫০)।

পাঠকের মতামত: