কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেই লজ্জাবতী বানরকে। পার্কের মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে সেই বানরটি এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার গাছের ডালেও উঠে পড়ছে বানরটি। যেন আবারো ফিরে পেয়েছে সেই বনের মুক্ত পরিবেশ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিলুপ্তির মুখে থাকা লজ্জাবতী বানরটিকে পার্কে আনা হয় চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে। এর আগে সোমবার রাতে চট্টগ্রামে আনা হয় বানরটিকে। এদিন সকালে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম মশিউর রহমান লজ্জাবতী এই বানরকে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রেরণের জন্য। জানতে চাইলে চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণি চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘পার্কে প্রেরণ করা লজ্জাবতী বানরটির ওজন প্রায় তিন কেজি। বয়স আনুমানিক দেড়বছর। পার্কে আসার পর বানরটিকে বন্যপ্রাণি হাসপাতালের প্রাকৃতিক ও মুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বানরটি সুস্থ রয়েছে।’চিকিৎসক মোস্তাফিজ আরো জানান, পার্কে আসার পর পরই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এই বানরকে খেতে দেওয়া হয় কলা, পাউরুটি, ডিম, সবজি। সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, বাংলাদেশে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে এই লজ্জাবতী বানর। সচরাচর মানুষের নাগালে থাকলে এই প্রজাতির বানরকে বাঁচানো যায় না। তাই ফুলের কলি, কচি পাতা, পোকা–মাকড় খেয়ে যাতে সে জীবন ধারণ করতে সেজন্য পার্কের প্রাকৃতিক ও মুক্ত পরিবেশে নতুন এই অতিথিকে অবমুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিরল প্রজাতির এই লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি নাম ‘ ো লোরিস’। প্রাণিকূলের মধ্যে এই বানর বিপদাপন্ন এবং বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণি। তাই প্রাণিটি সংরক্ষণের জন্য সাফারি পার্কই স্থায়ী নিবাস হিসেবে উত্তম স্থান। সংশ্লিষ্টরা চকরিয়া নিউজকে জানান, দিনের অধিকাংশ সময় লজ্জাবতী বানর গাছের মগডালে ঘুমিয়ে থাকে। রাতের বেলায় বিচরণ বাড়ে তাদের। মানুষ দেখলে অতিমাত্রায় লজ্জা পেয়ে থাকে বিধায় মুখ লুকিয়ে থাকতে অভ্যস্ত এই প্রাণি। আবার কোন মানুষের আক্রোশে পড়লে নিজেকে বাঁচাতে পেছনের দিকে ছুটতে থাকে। বাংলাদেশে সিলেট এবং পার্বত্য অঞ্চলে এই প্রজাতির বানরের দেখা মেলে। উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম মাটিরাঙ্গা উপজেলার বামাগুতি এলাকায় স্কুলপড়ুয়া দূরন্ত ছেলের দল বানরটিকে দেখতে পায়। এ সময় এক ছাত্র বানরটিকে ধরে নিয়ে যায় বাড়িতে। এর পর উৎসুক মানুষ ভিড় করতে থাকে ওই ছাত্রের বাড়িতে। এই খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌঁছলে বানরটিকে উদ্ধার করেন তিনি। এর পর চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেনের কাছে হস্তান্তর করে চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রেরণের জন্য।
পাঠকের মতামত: