বিদেশ ডেস্ক :
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো রাখাইন অঞ্চল সফরে গেছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। অবশ্য তিনি এ সফরের ব্যাপারে আগে কোনো ঘোষণা দেননি।
আজ বৃহস্পতিবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রাখাইনের রাজধানী সিত্তুইয়ে থেকে সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মংডু যান।
রয়টার্সের খবরে প্রকাশ, আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের সদস্য ক্রিস লেওয়া জানিয়েছেন, সু চি সেখানে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের একটি অংশের সাথে আলাপ করেন।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় কঠোর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী সু চি। জাতিসঙ্ঘ এ ঘটনাকে জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু মিয়ানমার জাতিগত নিধনের বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি চৌকিকে আক্রমণ করেছে।
সু চি রাখাইন পরিদর্শনকালে সেখানে কয়েকজন রোহিঙ্গা ধর্মীয় নেতার সাথে আলাপ করেন। তাদেরকে তিনটি কথা বলেন বলে জানিয়েছেন ক্রিস লেওয়া। কথাগুলো হলো- শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করো, সরকার তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং পরস্পর ঝগড়া করো না।
সু চি ২০১৫ সালে নির্বাচনে বিপুল জয়লাভের পর আর কখনো রাখাইন যাননি। এ রাজ্যের উত্তরাংশে মংডু পর্যন্ত বসবাসকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এ পরিদর্শনকালে ২০ জন সু চির সঙ্গী হয়েছেন। তারা সেনাবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টারে সেখানে যান।
আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যবসায়ী জ জ-ও সু চির সাথে রয়েছেন।
গত মাসে সু চি রাখাইনের উন্নয়নে গত মাসে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের এ কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে সু চি বলেছেন, যারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে তথ্য-প্রমাণ দিতে পারবেন তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
গত আগস্টে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে তারা পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
বুধবার রয়টার্সে একজন আলোকচিত্রী দেখেছেন, ছোট নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে বাস্তুচ্যুত হাজারো রোহিঙ্গা সীমান্তের নাফ নদী পাড় হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
নদী পাড় হয়ে তারা হেঁটে হেঁটে আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছে। তাদের অনেকের কোলে শিশু রয়েছে। অনেকে পিঠে করে বয়ষ্কদের বহন করছেন। সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রয়েছে তাদের কাঁধে।
বুধবার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় প্রবেশ করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাবাহিনীর দিক থেকে হুমকি আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় মিস সু চি দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে চান না।
গত বুধবার মিজ সু চি’র একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, রাখাইন প্রদেশ থেকে যে লাখ লাখ মুসলিম গত দুই মাসে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে গেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের কাজে বাংলাদেশের জন্যই দেরি হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে, সে জন্যই তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ঢিলেমি করছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
পাঠকের মতামত: