নিউজ ডেস্ক :::
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার ৩ দিন পরও কোনো সুফল দেখছেন না তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে (শূন্যরেখা) বসবাসরত রোহিঙ্গা ও এ দেশের সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা। সোমবার সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্র“ সীমান্তের শূন্যরেখায় সেনা টহল অব্যাহত রাখে মিয়ানমার। নতুন করে বাঙ্কারও খনন করেছে। এ ছাড়া কাঁটাতারের বেড়ার কাছেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনারা।
সোমবার প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- বিকাল ৩টার দিকে রাচিডং, বুচিডং থেকে আসা উচ্চপদস্থ বিজিপি, সেনা ও নাটাল বাহিনীর ৫০ জনের ৩টি গ্র“প পাহাড়ের উপরে অবস্থান নিয়ে বাইনোকুলার দিয়ে এ পারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। রাখাইন শ্রমিকরা নতুন করে পাহাড়ের উপর বাঙ্কার খনন শুরু করে। পাশাপাশি গাছের। উপর সিসি ক্যামরার মতো কিছু একটা স্থাপন করা হয়। শূন্যরেখায় রাতে সেনা, দিনে বিজিপি বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকায় সীমান্ত এলাকাবাসীর আতঙ্ক কাটেনি।
সূত্র জানায়, সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের বিরুদ্ধে কয়েক দফায় প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। পরে শুক্রবার দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে শূন্যরেখা থেকে অতিরিক্ত সৈন্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে কথা রাখেনি মিয়ানমার।
নো-ম্যান’স-ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা আবুল কালাম যুগান্তরকে জানান, সোমবার সকালে ৩-৪টি ট্রাকে বিজিপির সদস্যদের পাশাপাশি মিয়ানমার সেনারা সীমান্তে কাঁটাতারের পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সীমান্তের কোনাপাড়া এলাকায় বাঙ্কার খনন শুরু করে। বিজিপির সদস্যরা সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষে টহল দিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশ অব্যাহত আছে। পতাকা বৈঠকের পরও তারা আছে এবং চোখে পড়ার মতো আছে।
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান শুক্রবার পতাকা বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্র“ এলাকার শূন্যরেখায় সেনা টহল সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু ৩ দিনেও এ বিষয়টির সুরাহা হয়নি, বরং সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সোমবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, তুমব্রু সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে মিয়ানমার সৈন্যের অবস্থান রয়েছে। তাদের বিপরীতে বিজিবিও টহল জোরদার করেছে। বিজিবি দল কোনারপাড়া হয়ে তুমব্রু জিরো পয়েন্টের দিকে টহল অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি গত তিন দিন সীমান্তে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, সীমান্তে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তুমব্রুতে ৩টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ঠিক কৌশল নয়, এটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তির একটি ব্যবহার। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বদা সতর্ক প্রহরায় রয়েছে। নতুন করে সীমান্তে কোনো জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার জানিয়েছিল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে সীমান্তে সেনা-বিজিপির টহল বাড়িয়েছে তারা। তাই সার্বিক সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। ক্যামেরায় দেখা গেছে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে মিয়ানমার।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাচ্ছে না মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা নানা অজুহাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কৌশলগতভাবে কিছুটা সামরিক চাপ সৃষ্টি করা দরকার বলেও মনে করেন এ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গারা নির্যাতিত ও দেশ ছাড়া হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক মহলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন দুর্বল। এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে যদি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা যায় তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সহজ হবে।
পাঠকের মতামত: