ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

সর্বহারা পরিচয়ে চকরিয়ায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি

ছোটন কান্তি নাথ,  চকরিয়া :::
চরমপন্থি সর্বহারা পার্টির নেতা পরিচয় দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মুঠোফোনে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে কয়েকদিনের মধ্যে পরিবার সদস্যদের অপহরণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলারও হুমকি দেওয়া হয়। এতে ওই ব্যবসায়ীর পরিবার সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের এবং পরিবার সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ওই ব্যবসায়ী। বিষয়টি গতকাল রবিবার বিকেলে থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী রুজু করতে বলেছেন।
চাঁদা দাবি ও হুমকির শিকার ব্যক্তির নাম গোপাল দাশ (৩৮)। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ার মৃত অন্নদা চরণ দাশের পুত্র এবং বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি চকরিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোপাল দাশ মহাজনের কাছ থেকে চরমপন্থি সর্বহারা পার্টির নেতা পরিচয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে চাঁদা দাবি ও পরিবার সদস্যদের অপহরণের হুমকি দেওয়ার পর থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গোপাল দাশ গতকাল রবিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, শনিবার বিকেল চারটা ৪০ মিনিটের দিকে ০১৮৭৯-১১৫৪৭৮ নম্বর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। এ সময় তিনি নিজেকে চরমপন্থি সর্বহারা পাটির নেতা পরিচয় দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় কেন চাঁদা দিতে হবে জানতে চাইলে, অপর প্রান্ত থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিটি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দলের ১৩০-১৪০ জন কর্মী চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছে। তাদেরকে মুক্ত করতে হলে ৮০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন রয়েছে। তবে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা কম রয়েছে। তাই এক ঘন্টার মধ্যে আপনাকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের দলের চেয়ারম্যান সেনাবাহিনী থেকে ইতিমধ্যে চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়াউদ্দিনের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
গোপাল দাশ বলেন, ‘যখন আমাকে ফোন করে চাঁদা দাবি ও এসব কথাবার্তা বলছিলেন তখন লাইনটি কেটে যায়। এর পর চারটা ৪৮ মিনিটের দিকে আবারো ফোন করেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। এ সময় লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণও জানতে চান অজ্ঞাত ব্যক্তি। তখন আমি তাকে উল্টো প্রশ্ন করি ‘আপনি যে দলের নেতা তা আমি কিভাবে বুঝবো। এ সময় তিনি হুমকি স্বরূপ কথাবার্তা বলতে থাকেন। বলেন, ‘আপনি যদি এত উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেন তাহলে দু-তিনদিনের মধ্যে আপনার পরিবারের কোন এক সদস্যকে অপহরণ বা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে বোমার বিষ্ফোরণ ঘটাই। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন আমাদের শক্তি কত। আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না আপনার চারিপাশে আমাদের দলের অসংখ্য সদস্য ঘুরছে, আপনাকেও তারা খুব ভাল করেই চেনে। অতএব এত কথা না বলে তাড়াতাড়ি টাকা দেবেন কী-না সেটাই বলেন।’
জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোপাল দাশ আরো বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমি শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত সময় চাই অজ্ঞাত ব্যক্তিটির কাছে। তখন তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে’ বলে লাইনটি কেটে দেন।’ স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল দাশ জানান, অচেনা ওই ব্যক্তিটি মুঠোফোনে চাঁদা দাবি ও পরিবার সদস্যদের অপহরণের হুমকি দেওয়ার পর বিষয়টি তার বড়ভাই চকরিয়া পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লক্ষ্মণ কান্তি দাশকে জানিয়েছেন।
চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর লক্ষ্মণ কান্তি দাশ বলেন, ‘অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি ও পরিবার সদস্যদের অপহরণের হুমকি দেওয়ার পর স্বভাবতই আমাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে এমন ঘটনায় আমরা বিচলিত। তাই ছোটভাই গোপালকে বলেছি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী রুজু করতে। ইতিমধ্যে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজমকে মৌখিকভাবেও অবহিত করেছি। তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে বলেছেন।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম বলেন, ‘অজ্ঞাত স্থান থেকে মুঠোফোনে জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোপাল দাশ মহাজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও পরিবার সদস্যদের অপহরণের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ সময় তার বড়ভাই কাউন্সিলর লক্ষ্মণ দাশকে বলেছি, থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রুজুর পর ব্যাপকভাবে তদন্ত করা হবে আসল বিষয় কি।’

পাঠকের মতামত: