অনলাইন ডেস্ক :: ইয়াবা পাচার ও বিক্রিতে জড়িত অভিযোগে এক কারখানা মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যিনি ‘শূন্য হাতে’ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় এসে নয় বছরে বাড়ি-গাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন।
গ্রেপ্তার গোলাম ফারুকের গাজীপুরে একটি গার্মেন্ট ও এলেজা এক্সপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে মেশিনারি ফ্যাক্টরি রয়েছে। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকে এই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০০ টাকা, একই ব্যাংকে নিজের নামে অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৯৮ টাকা, স্ত্রী আফরোজা আক্তার এ্যানীর নামে ১৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র, মেয়ের নামে মধ্য বাড্ডায় ৯০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা ফ্ল্যাট, আফতাবনগরে নিজের নামে ৯০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা ১৪ দশমিক ৫ ডেসিমেল জমি, গাজীপুরে ৯০ লাখ টাকায় নিজের নামে ৪ ডেসিমেল জমি রয়েছে।
এসবের বাইরে প্রতিটি ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে কেনা দুটি গাড়ি এবং দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনা একটি মটরসাইকেল রয়েছে ফারুকের।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার প্রায় দেড় বছর আগের দুটি মাদক মামলার তদন্তের শেষ পর্যায়ে এসে সোমবার বাড্ডা থেকে ফারুক এবং আগেরদিন তার স্ত্রী আফরোজাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা।
গোলাম ফারুক; শূন্য হাতে ঢাকায়ে এসে ইয়াবা চোরাচালানে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার সম্পদের বিবরণসহ মামলা তদন্তের সবিস্তার তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ওই মামলার তদন্তে গিয়ে তারা মাদক পাচার ও বিক্রিতে জড়িত ছয়টি সিন্ডিকেটের সন্ধান পান। তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের নুরুল হক ভুট্রোর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সদস্য গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী আফরোজা আক্তারকে ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের ৩৪ জনকে গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোল্যা নজরুল বলেন, গত বছর অগাস্ট মাসে তদন্ত শুরুর পর নুরুল হক ভুট্রো, তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ, বাবা এজাহার মিয়াসহ ১৭ জনের নামে মাদকের কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর টেকনাফ থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হয়।
পরে ভুট্রো ও তার বাবাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পর দেখা যায়, তারা ইয়াবার বড় বড় চালান মোট ছয়টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাত।
২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভুট্রোসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যংক একাউন্টে মাদকের প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরপর বিকাশের মাধ্যমে ওই হিসাবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কোটি টাকা লেনদেন করে।
নুরুল হক ভুট্টো; কক্সবাজারে রিকশা চালাতেন-স্বজনদের নিয়ে ইয়াবা পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন তিনি।
ভুট্রো মাদকের একজন ‘গডফাদার’ হয়ে উঠেছিলেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল বলেন, “তাদের পুরা পরিবারের মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণসহ তাদের ব্যাংক একাউন্টে লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।”
তিনি বলেন, ভুট্রো ২০০৯ সালে কক্সবাজারে রিক্সা চালাতেন। পরে তিনি ইয়াবা পাচারের টাকায় বিরাট বাড়ি করেন সেখানে।
“ভুট্টোর মতোই ফারুকও ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলেন মাদকের টাকায়। ২০০৯ সালে ফারুক চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় একেবারে শূন্য হাতে আসে। তার পরিবার খুবই গরিব।
“এই ফারুকের সাথে ভুট্রোর চাচা গুড়া মিয়ার সম্পর্ক হয় এবং ভুট্রোর মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। দিনে দিনে টাকার পাহাড় গড়ে তোলে ফারুক।”
মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইয়াবা পাচার ও বিক্রিতে জড়িত ৩৪ জনকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন মিরপুর সেনপাড়া, বিহারী ক্যাম্প, নরসিংদী, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও জয়পুরহাট থেকে। এদের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও বিকাশ এজেন্ট রয়েছে।
এদের মধ্যে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বড় দাড়ি রেখে কাতারের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে নিয়মিত নামাজ আদায়ের ফাঁকে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যেত, এমন ব্যাক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি জয়পুরহাটে ‘গোল্ড আবুলকে’ গ্রেপ্তার করতে গিয়ে ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতার মুখে পড়ার জানান জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
“গোল্ড আবুল স্ত্রীকে বোন বলে পরিচয় দেয় এবং বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছে বলে জানায়। একই সময় তার মেয়ে বাবাকে মামা বলে পরিচয় দিয়ে তাকে কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার কৈফিয়ত চায়। এটা ছিল চরম বিব্রতকর। গোল্ড আবুলকে আগে থেকে চেনার কারণে কোনো অসুবিধা হয়নি,” বলেন তিনি।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এই মাদক চোরাচালন চক্রের আরও ছয়-সাতজনের নাম পেয়েছেন তারা। এখন তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
–বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
পাঠকের মতামত: