মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: করোনা সংক্রামনের ফলে দেশে প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধহলেও বন্ধ নেই স্কুলের মাসিক বেতন,পরীক্ষার ফি সহ অন্যান্য ফি। এমনকি ২০২০ সালে সরকার সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অটোপাস হিসাবে বিবেচনায় নিলেও ঠিকই কেজি এবং মাধ্যমিক স্কুল, বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গুলোতে শিক্ষার্থীদের দিতে হয়েছে নতুন ক্লাসে ভর্তি ফি। এতে শিক্ষার্থী কিংবা অভিবাবকদের কোন কথাই শুনছেনা কর্তৃপক্ষ। এতে করোনা সংকটে অনেক দরিদ্র অভিবাবক আয় রোজগার বন্ধ থাকলেও ঠিকই ধারদেনা করে শুধ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী প্রতিষ্টানের ফি।
টেকপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আজিজ পেশায় ভ্যান চালক স্ত্রী সহ ৫ জনের পরিবার আগে কোন মতে জীবন সংসার চললেও বর্তমানে দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। কারন আয় বন্ধ,তবে তিন সন্তানের স্কুলের বেতন ভর্তি ফি পরীক্ষার ফি দিতে সম্প্রতী ৪ হাজার টাকার দরকার হলে পার্শবর্তী এক ব্যাক্তির কাছ থেকে চড়া শুধে টাকা নিয়েছেন। সম্মানের স্বার্থে স্কুলের নাম না বল্লেও তিনি বলেন, আমি স্কুল জানুয়ারী মাসেও ৬ষ্ট এবং ৯ শ্রেণীতে ভর্তি ফি বাবদ সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে অনেক চেস্টা করে কয়েকবার স্কুলে গিয়ে ২ হাজার টাকা মাফ করেছে বাকি টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, একদিনের জন্যও ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় না তবে ঠিকই সমস্ত ফি দিতে হয় এটা কেমন আইন আমি বুঝিনা।
ঘোনারপাড়া এলাকার দুলাল পাল নামের একজন জানান,আমি সামান্য পানের দোকানদার,দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে প্রধান সড়কে পানের দোকান হওয়াতে দোকান খুলতে পারিনি আর বর্তমানে আমার পার্শবর্তী রেস্টুরেন্ট খুলা না থাকায় বেচাবিক্রি নাই। কোন মতে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছি তবে ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজের বেতন আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ে সেখানে গত মাসে ৩৫০০ টাকা দিয়ে এসেছে। আমার মতে ক্লাস না চললেও কেন শিক্ষা প্রতিষ্টানে টাকা নেবে এ বিষয়ে সরকারের একটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এদিকে জেলার বিভিন্ন কেজি স্কুল গুলোর অবস্থা আরো কঠোর, তারা মাস শেষ হওয়ার আগেই অভিবাবকদের ফোন দিয়ে মাসিক ফি সহ অন্যান্য ফি আদায় করে নেয়, এমনকি পরীক্ষা না হলেও ঠিকই আদায় করছে পরীক্ষার ফি। কেউ কিছু বলতে পারছেনা, কিছু বললে উল্টো বলে শিক্ষকদের বেতন দিতে হচ্ছে সেগুলো কে দেবে আর না পোষালে বাচ্চা নিয়ে যান। এখন ক্লাস ও চলছেনা বাচ্চা নিয়ে গিয়ে আবার কোথায় দৌড়াদৌড়ি করবো তাই তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি।
বিমানবন্দর সড়কে থাকা এই স্কুলটি শিক্ষার্থীদের কোন ছাড় দিচ্ছেনা। বরং প্রধান শিক্ষকের ব্যবহারে অভিভাবকরা চরম অসন্তোষ্ট। তবে কেউ কিছু বলতে চায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সালাউদ্দিন সেতু বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ শিক্ষার্থীদের বেতন ভাতা নিয়ে সমস্যার কথা বুঝাতে আসে। অনেকে দরখাস্ত নিয়ে স্কুলে কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশের জন্য আসে। যদিও আমি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদে আছি তবে অন্যান্য স্কুলে সুপারিশ করলেও আমাদের কথা তেমন বেশি রক্ষা করেনা তাই অনেক সময় লজ্জা পায়। তিনি দাবী করেন শহরের কয়েকটি স্কুল কলেজ সত্যিকার অর্থে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। এ বিষয়ে একটি সরকারি সিদ্ধান্ত আসা উচিত।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কেজি স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শতভাগ টাকা আদায় করলেও আমাদের বেতন দিচ্ছে অর্ধেক। তাই অনেক বার খোঁজার পর। কোন কিছু জানতে চাইলে বলে শিক্ষার্থীরা বেতন দিচ্ছে না তাই আপনাদেরও কম নিতে হবে। মনে হয় আমাদের পরিবার নাই বা আমরা মানুষ না। তাদের দাবী ভালমত খবর নিলে দেখা যাবে লকডাউনে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
পাঠকের মতামত: