ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে মাসব্যাপী সফরে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দল

Malaysia-Terrengano-Versity-student-in-CVASU-Cox-11.07.17-1-760x540-760x540বার্তা পরিবেশক :
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) নবপ্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার ক্যাম্পাস মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে। মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের একদল শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে আজ মঙ্গলবার এ সফরে আসেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া তেরেঙ্গানোর স্কুল অব ফিশারিজ এন্ড একোয়া কালচার বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ফজলুল হিসাম বিন আবদুল আজিজ। গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া তেরেঙ্গানো’র সাথে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় তারা এক মাসের জন্য বাংলাদেশে ইন্টার্নশীপের সুযোগ পাচ্ছেন। এরই অংশ হিসাবে তারা এগার দিন কক্সবাজার ক্যাম্পাসে অবস্থান করে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। একই চুক্তির আওতায় সিভাসুর ফিশারিজ বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গতবছর নভেম্বরে মালয়েশিয়া সফর করেন। এ সফরের খরচ স্বাগতিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে থাকে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীরা কক্সবাজারে এসে পৌঁছালে তাদেরকে স্বাগত জানান সিভাসুর ফিশারিজ অনুষদের মেরিন বায়োরিসোর্স বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এসময় ওই অনুষদের চূড়ান্ত পর্বের একদল শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে সিভাসু’র ফিশারিজ অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. নুরুল আবছার খান জানান- বাংলাদেশের ১২টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বা মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই এই কারিগরি বিষয়ে ইণ্টার্নশীপ প্রোগ্রামের সুযোগ ছিল না। ফলে শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকুরী জীবনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে তারা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। কিন্তু কক্সবাজার ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার পর মাঠ পর্যায়ের সেই ঘাটতি আর রইল না। সেসাথে গত বছর দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার একটি চুক্তিস্বাক্ষরের পর বিদেশে গিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। এটা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন মাইল ফলক হয়ে রয়েছে।
এবিষয়ে সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন- ‘চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কারিগরি বিষয়সমূহে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান এবং হাতে-কলমে ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রাণি চিকিৎসা বিষয়ে এক বছর মেয়াদী ইর্ন্টানশীপ কর্মসূচী চালু করে। পরবর্তীতে ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও ৪ বছরের কোর্স কারিকুলামের মধ্যে ৬ মাস দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ইণ্টার্নশীপের সুযোগ পাচ্ছে।’
তিনি আরো জানান- ‘মাৎস্যবিজ্ঞান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ অনুষদ হিসেবে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু দেশের অন্যান্যবিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই কারিগরী বিষয়ে ইণ্টার্নশীপ প্রোগ্রামের সুযোগ ছিল না। এই উপলদ্ধি থেকে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে সর্বপ্রথম মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ২০১৬ সাল থেকে স্নাতক পর্যায়ে ৩ মাসের ইণ্টার্ণশীপ চালু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত বিষয়সমূহে ছাত্রছাত্রীদের আরও দক্ষ ও দূরদর্শী করতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইণ্টার্নশীপের পাশাপাশি বিদেশেও ইণ্টার্নশীপ ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক বলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন অনুধাবন করে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ছাত্রছাত্রীরা দ্বি-পক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসাবে ভারতের তামিলনাড়– ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়েএবং মাদ্রাজ ভেটেরিনারি কলেজে এক মাসের জন্য ইণ্টার্নশীপের সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের বাছাইকৃত ছাত্রছাত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্্ট ইউনিভার্সিটিতেও এক মাসের ইণ্টার্নশীপের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ফুড সাইন্স ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৈদেশিক ইন্টার্নশীপের সুযোগ ছিল না। মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে যোগাযোগের এক পর্যায়ে উভয় বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হয়। এরই আওতায় গতবছর নভেম্বরে সিভাসুর শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়া গেছে এবং মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এসেছে। মঙ্গলবার থেকে ১১ দিনের জন্য তারা কক্সবাজারে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এরপর আসবে আরেকটি দল।
উপাচার্য আরো জানান- মাৎস্য খাতে শিক্ষা ও গবেষণায় মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশও কাজে লাগাতে পারবে।
তিনি বলেন- দেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর সরকার ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পর্কিত অর্থনীতি জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই লক্ষ্যে দক্ষ লোকবল তৈরীর জন্য কক্সবাজার ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেখানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

 

 

পাঠকের মতামত: