ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লবণ মাঠে ব্যস্ত চাষি

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া  :::solt,

লবণ উত্পাদন মৌসুমের শেষদিকে এসে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে চাষিদের। সমপ্রতি দুদফা বৈরী আবহাওয়ার সাথে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতে বেশ ক্ষতির শিকার হন কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কয়েক হাজার লবণচাষি।

উত্পাদনের মোক্ষম সময়ে হঠাৎ প্রকৃতির বৈরী আচরণে দুই উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার একর মাঠে লবণ উত্পাদন ব্যাহত হয়। এতে কম করে হলেও কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন চাষি।

তবে কয়েকদিনের মাথায় আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় ফের লবণ উত্পাদনে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন চাষি। তাঁরা আর সময় নষ্ট না করে কীভাবে লবণ উত্পাদন করা যায় সেদিকেই নজর দিয়েছেন।

লবণ উত্পাদনের মোক্ষম সময়ে হঠাৎ করে প্রকৃতি বৈরী আচরণ করায় তাঁদের মাথায় বাজ পড়ার মতো উপক্রম হয়েছিল।

বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত চলাকালীন লবণমাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে লবণ উত্পাদনের জন্য বিছানো পলিথিন মুড়িয়ে মাঠে ফেলে রাখেন চাষি।

অনেক মাঠে উত্পাদিত লবণ মাঠের মধ্যেই গর্ত করেও পুঁতে রাখা হয়।

পরবর্তীতে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত লবণ মাঠ নতুন করে উত্পাদন উপযোগী করার পর ফের পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উত্পাদন শুরু করেন চাষিরা। বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, খুটাখালী, ডুলাহাজারা ও পেকুয়ার সদর, রাজাখালী, উজানটিয়া, মগনামা, টৈটংসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার চাষি।

চকরিয়ার লবণচাষি হারুণুর রশিদ জানান, সনাতন পদ্ধতিতে যেসব চাষি লবণ উত্পাদন করেন, তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সে তুলনায় পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উত্পাদনকারী চাষিরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এতে দুই উপজেলার কয়েক হাজার চাষির কম করে হলেও কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

তিনি বলেন, ‘তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গিয়ে বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা দেদার লবণ উত্পাদনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।

চাষিরা ইতিমধ্যে লবণ উত্পাদন করে সেই ক্ষতি পুষিয়েও নিয়েছেন। আরো অন্তত দেড়মাস ভালো আবহাওয়ায় রৌদ্রোজ্জ্বল থাকলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উত্পাদন হবে। ’

বাংলাদেশ লবণচাষিরা  বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

এতে কক্সবাজারের সাত এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আরো উদ্বৃত্ত লবণ উত্পাদন করা যাবে। দেশের মানুষ এবং শিল্পখাতে লবণের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে এবারের উত্পাদিত লবণ। তবে সবসময় আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে দেদার লবণ উত্পাদনের পরও লবণ মিল মালিকদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারায় লিপ্ত থাকায়। ’

চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটার লবণচাষি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাহ বাজারের লবণচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, লবণ উত্পাদনের মোক্ষম সময়ে প্রকৃতির বৈরী আচরণে যেন আমাদের মাথায় বাজ পড়েছিল। লবণচাষের জন্য দাদনদারের কাছ থেকে নেওয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো সেই দুশ্চিন্তা ভর করছিল। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় আমরা আবারও মাঠে নেমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মাঠে কাজ করছি। আগামী মে মাস পর্যন্ত এভাবে আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উত্পাদন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, কক্সবাজারের সাত উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রতিবছরের মতো এবারও ভোজ্য এবং শিল্পখাতে প্রায় ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

বিসিক কক্সবাজারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লবণ উত্পাদনের ভর মৌসুমের মাঝখানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। এতে কিছুটা বিঘ্নিত হয় লবণ উত্পাদন। তবে এখন আবহাওয়া ভালো থাকায় লবণ উত্পাদনও বেশ ভালো হচ্ছে। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লবণ উত্পাদন করতে পারবেন চাষিরা। ’

তিনি জানান, ভোজ্য ও শিল্পখাতে লবণ উত্পাদনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কক্সবাজারের সাত উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে মার্চের শেষ তারিখ পর্যন্ত ১০ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি লবণ উত্পাদন হয়েছে। বাকি সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে লবণ উত্পাদনের।

পাঠকের মতামত: