ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের লক্ষ্যে লবণ চাষী মাঠে প্রতিমণ ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী :  চলতি মৌসুমে কক্সবাজার অঞ্চলের ৬৪ হাজার একশত ৪৭ একর জমিতে ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। বিসিকের হিসেব মতে, চলতিবছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত লবণ উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে গতবছরের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে পুরোদমে লবণ চাষে নেমেছেন লবণ শিল্পের সাথে জড়িত স্থানীয় চাষীরা।
গত রোববার দুপুরে বিসিক কক্সবাজারের আঞ্চলিক উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে নভেম্বর মাসে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। সেই কারণে লবণ উৎপাদনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও গেল দুই মাসে (ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) ৬৪ হাজার একশত ৪৭ একর জমিতে এক লাখ ৩৭ হাজার দুইশত মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তিনি জানান, আগামী মে মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে উৎপাদন মৌসুম। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আরো অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার বৃহত্তম লবণ বিপণন প্রতিষ্ঠান ইউনুছখালী এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ এখলাছুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরুতে ভাল দাম থাকলেও বর্তমানে উৎপাদন এলাকার প্রতিটি মোকামে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন হচ্ছে। সেই কারণে বাজারে লবণের দাম কিছুটা উঠানামা হচ্ছে। এখন প্রতিমণ লবণ মহেশখালী উপজেলার মাঠে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা দরে। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল আছে যেমন সড়কের পাশের মাঠ থেকে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা হারে। অপরদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা একটু কষ্টসাধ্য যেমন সড়ক থেকে একটু দুরে অবস্থিত লবণ মাঠ। ফলে সেখান থেকে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ লবণ ২৭০ টাকা দরে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার আঞ্চলিক বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, চলতি মৌসুমে ১৩টি কেন্দ্রের ( মোকাম) অধীনে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা (আংশিক) সহ ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ চাষ করা হচ্ছে। তারমধ্যে মহেশখালী উপজেলার নোনাছড়ি মোকামে ৬ হাজার ৬১৮ একর, উত্তর নলবিলা মোকামে ৬ হাজার ৫২৮ একর, গোরকঘাটা মোকামে, হাজার ৮৭৭ একর, মাতারবাড়ি মোকামে ৫ হাজার ৫৮ একর ও মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে স্থাপিত লবণ প্রর্দশনী কেন্দ্রে ৯৪.২৬ একর, চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা মোকামে ১১ হাজার ৯৪১ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি মোকামে ১ হাজার ৮৫৩.৭৪ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার পূর্ব বড়ঘোনা মোকামে ৫ হাজার ৭৮৮ একর, টেকনাফের মোকামে ২ হাজার ৪৬৬ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি, সদর উপজেলার গোমাতলীর ৩ হাজার ৩০৮ একর, চকরিয়া উপজেলার দুলাহাজারা ইউনিয়নে ২০০ একর, খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়িতে ৩ হাজার ৮৫০ একর ও বাঁশখালী উপজেলার সরল ঘোনার প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৩৮৮ একর জমিতে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উপজেলার কালারমারছড়া লবণ চাষের জমির মালিক ও চাষী মহিবুল্লাহ বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকার কারণে প্রতিবছরই বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দেশে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। বিসিক ও চাষীদের প্রতিবছরের তথ্য থেকে বিষয়টি প্রতীয়মান। কিন্তু, প্রতিবছর একটি প্রভাবশালী অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সরকারের উচ্চ মহলে ভুল তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে থাকে। ফলে দেশীয় লবণের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়লে চাষীরা আর্থিকভাবে দেউলিয়ার মুখোমুখি হয়। তিনি বলেন, দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কয়েকজন প্রান্তিক লবণচাষীরা জানান, গত দুই মৌসুমে সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করায় এবং সরকারিভাবে উপকূলীয় এলাকায় লবণচাষীদের বাঁচাতে লবণ নীতিমালাসহ দাম বৃদ্ধি করায় আমরা লবণ উৎপাদনের লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন নিয়ে মাঠে নেমেছি। সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে (পলিথিনের) মাধ্যমে সাদা সোনাখ্যাত লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। মহেশখালী উত্তরনলবিলা লবণ কেন্দ্র প্রধান মরিুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুম ভাল থাকলে এবং সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করলে চাষীরা নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন।
ছড়িয়ে দিন:

পাঠকের মতামত: