ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনলেন জাতিসংঘের দূত

নিউজ ডেস্ক ::

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর হামলা-হত্যা-ধর্ষণের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছেন জাতিসংঘের রোহিঙ্গাবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে ইয়াং হি লি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। সেখানে পরিদর্শন শেষে তিনি যান টেকনাফ নেচার পার্কে। সেখানের অভ্যর্থনাকেন্দ্রে বাস্তুচ্যূত হয়ে আসার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যমতে, গত ২৫ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাঁরা বিপৎসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানে এরই মধ্যে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ সব মিলিয়ে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।

এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মিয়ানমার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পরিহার করার পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দেশের নাগরিক বা স্বতন্ত্র নৃগোষ্ঠী বলেও স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়।

যদিও গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে করা চুক্তিতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতিদিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাবে। কয়েক মাস পর এই সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না মিয়ানমার সরকার সেটি বিবেচনায় নেবে। এ জন্য এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গার একটি তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে কিছু দাবিনামা সামনে আনার চেষ্টা করছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলা।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একদল রোহিঙ্গা গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ করেছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি ব্লকে এই বিক্ষোভে শতাধিক শরণার্থী অংশ নেয়। যদিও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানায়।

এর মধ্যেই আজ শনিবার ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন জাতিসংঘের বিশেষ এই দূত। ইয়াং হি লি বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান এবং শুক্রবার দুপুরে তিনি কক্সবাজার আসেন। উখিয়ার দমদমিয়া ক্যাম্পে পৌঁছার পর আইওএম ও ক্যাম্পে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্তকর্তারা উপস্থিত তাঁকে স্বাগত জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নেচার পার্কের অভ্যর্থনাকেন্দ্রে মিয়ানমারের ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

এরপর দুপুর ১২টার দিকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। দুপুর আড়াইটার সময় তাঁর রক্ষ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের এই বিশেষ দূতের চলতি মাসে মিয়ানমার সফরের কথা থাকলেও দেশটির নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারেননি। মিয়ানমারের পরিবর্তে ইয়াং হি লি বাংলাদেশে সফরে আসেন। সাতদিনের সফরে পাঁচদিন বাংলাদেশে থেকে আগামী বুধবার তিনি থাইল্যান্ড সফরে যাবেন।

পাঠকের মতামত: