:: এইচ এম আবু ছিদ্দিক ::
সাম্প্রতিক একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে কথা হয়। তিনি একটি পাঠক প্রিয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদনা ছাড়াও আরেকটি ইলেকট্রোনিক্স মিডিয়ার স্বনামধন্য টেলিভিশন চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি। কথার প্রসঙ্গে সে বললো, কথিত রোবটমানবী সুফিয়া নাকি প্রেগন্যান্ট। তার আচমকা কথা শুনে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও প্রতিনিয়ত তাড়া করছে আমাকে। মানুষের বানানো রোবট কি সত্যিই প্রেগন্যান্ট? নাকি নকল প্রযুক্তির অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেয়ার নতুন কৌশল। জ্ঞানগর্ভভিত্তিক প্রযুক্তি অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যুগোপযোগী প্রযুক্তি আবিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সামনে আরও এগিয়ে যাবে। এতে দ্বিমত পোষণের কোন সুযোগ নেই। বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের বুদ্ধিমত্তা মস্তিষ্কের ক্ষমতার খুব কম অংশই এখন পর্যন্ত কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে। আরও অনেক ক্ষমতা কাজে লাগানোর অপেক্ষায়। প্রতিটি মানুষই তাই অসীম ক্ষমতাধর। গত কয়েক দশকে প্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে অভাবনীয় মাত্রায়। তবে আসল মানুষকে অনুকরণ করে কথিত রোবটমানব সুফিয়ার মতো নকল প্রযুক্তি তৈরীর খবর আগে কখনও এভাবে আলোচিত হয়নি। সাম্প্রতিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ডিজিটেল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ শেষ হয়েছে। প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ সুফিয়াকে জানার কোন আগ্রহ আমার ছিলনা। হঠাৎ প্রেগনেন্সির কথা শুনে কথিত রোবটমানবী সুফিয়াকে নিয়ে ছোট্ট করে লেখার অনুভূতি জাগে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেদিন কি হয়েছিল তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রয়োজন। মঞ্চে আনুষ্ঠানিক আলাপের পূর্বে রোবটের পুরো শরীরে যন্ত্রপাতি দিয়ে মুড়ানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথিত রোবটমানব সুফিয়ার উপস্থিতিতেই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। যন্ততন্ত্র দিয়ে সাজানো সুফিয়া তখনই নাকি সন্তান জন্ম দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সুফিয়াকে যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করতে আসল সুফিয়ার বিকল্প নেই। সে কিভাবে সন্তান জন্ম দেবে আমার বোধগম্য নয়। যারা এসবে বিশ্বাসী তারাকি কখনো রোবটের নির্মাতা ডেভিট হ্যানসনের কাছে জানতে চেয়েছেন? সন্তান জন্ম দিতে সুফিয়ার জন্য পুরুষ রোবট লাগবে কিনা? নাকি কম্পিউটারের মতো বিভিন্ন ডিভাইস ও সফ্টওয়্যারের সমন্বয়ে উৎপাদন করা হবে। আগামীতে প্রযুক্তি আরও এগিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সুফিয়ার নির্মাতা ডেভিট হ্যানসনের মতো আরও অনেকেই রোবটমানব বানিয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে। শাসকেরা কেউ নাগরিকত্ব দেবে আবার কেউ মঞ্চে নাটক মঞ্চস্থ করবে। আবার কেউ রোমুট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মানব বিধ্বস্তি কাজে রোবটের অপব্যবহার করবে। এরকম প্রাযুক্তিকের নকল উদ্ভাবন প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির অপব্যবহারকারীদের কর্মকান্ড গোটা মানবজাতি অস্তিত্ব সংকটে পড়বেনাতো? এমনিতেই বিশ্বনেতারা অনেকেই ড্রোনের অপব্যবহার, পরমাণু বোমা ও যুদ্ধবিমানসহ অগ্নেয়াস্ত্র বানিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। তার উপর আবার কথিত রোবটমানব সুফিয়ারা যুক্ত হলে রাস্তায় পড়ে থাকা আসল সুফিয়ার অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কা ফেলে দেয়ার নয়। একদিকে শাসকেরা প্রাণহীন রোবটের পিছনে কোটি টাকা খরচ করবে। অন্যদিকে সৃষ্টির সেরা মানব আসল সুফিয়ার সন্তানেরা অনাহারে-অর্ধহারে রাস্তায় পড়ে থাকবে। এই সংস্কৃতিতো মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধাচরণ। দেশের অধিকাংশ মানুষের এখনও পুরোপুরি কর্মসংস্থান হয়নি। আর যাদের নুন্যতম কর্মসংস্থান হয়েছে, তাদের আবাসন সুবিধা বা সন্তানের পড়ালেখার নিশ্চয়তা এখনো দিতে পারেনি সরকার। কথিত রোবটমানব সুফিয়াকে আনতে প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। এতগুলো টাকা দেশের প্রযুক্তিখাতে ব্যয় করলে আমাদের সোনার ছেলেরা নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কথিত রোবটমানব সুফিয়াকে এনে জাতির কি লাভ হলো সেটা আমার চেয়ে প্রদর্শনী আয়োজকেরাই ভাল বলতে পারবেন। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু জানি প্রকৃতির সমন্বয় ছাড়া প্রযুক্তি অচল। প্রকৃতিকে আঘাত করে রোবটমানব সুফিয়াকে বানানো হয়েছে। সেই মানববিধ্বংসী রোবট নিয়ে মিডিয়াব্যক্তিত্বসহ যারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে লেখকের ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে লেখাটি শেষ করব। সুফিয়ার নির্মাতা প্রাযুক্তিক ডেভিট হ্যানসন কথিত রোবটমানব সুফিয়াকে প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার বলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা লুফে নিচ্ছেন, বা যারা দিচ্ছেন। তাদের সাধুবাদ দেয়ার কোন সুযোগ আমার নেই। তবে আমি নিশ্চিত বলতে পারি, সে নতুন কিছু আবিষ্কার করেননি। বরং মহান সৃষ্টিকর্তার সেরা জীব মানুষকে অনুকরণ করে প্রকৃতির সৃষ্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা মাত্র। তার বানানো কৃত্রিম সুফিয়া প্রকৃতির সৃষ্টি আসল সুুফিয়ার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়ার বা কথা বলার কোন ক্ষমতা নেই। কৃত্রিম সুফিয়াকে যেই পাত্রে রাখে, সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। প্রাযুক্তিক ডেভিট হ্যানসনের নকল পণ্যের বিজ্ঞাপণ দাতা হিসাবে যারা অর্থ অপচয় করছেন। তারা দেশের সর্বসাধারণের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গায় কতটুকু সচেতন, নাকি অবচেতন। জনগণের আমানতের টাকা অপচয় করে নকল প্রযুক্তির নাটক মঞ্চস্থ করা, জাতির পায়ে কুড়াল মারার সামিল। ¯্রষ্টার অসংখ্য সৃষ্ঠির অন্যতম সেরা জীব মানবজাতি। আজ থেকে কয়েক হাজার দশক পূর্বে সৃষ্টিকর্তা মানবজাতিকে লিঙ্গ আলাদাভাবে নর এবং নারীকে সৃষ্টি করেছেন। যেন উভয়ে একে অপরের সাথে মধুর মিলনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়। মহান আল্লাহ রব্বূল আ’লামীনের হাজারো সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানবজাতিই তাঁর নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা বিশ্বজগতকে উপলব্ধি করতে সক্ষম। মানবজাতির কল্যাণে আল্লাহ্র প্রদত্ত সর্বোৎকৃষ্ট বিজ্ঞান পবিত্র আল্ কোরআনে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে। জন্ম, মৃত্যু, হায়াত সবই একমাত্র আল্লাহর হাতে। এতে সন্দেহ করার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং- কথিত রোবটমানব সুফিয়ার প্রেগনেন্সির খবর গুজবতো বটেই, সমস্ত নারী জাতির কলঙ্ক নয় কি? বিস্তারিত পরে আসছে।
লেখক: কলামিস্ট ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, দৈনিক কক্সবাজার বানী।
মোবাইল:- ০১৫৫৮৩৬৩৩৪৩,
পাঠকের মতামত: