সোয়েব সাঈদ, রামু :: রামুর রাবার বাগান মাদকসেবী, চোর-ডাকাত আর অপহরণকারি চক্রের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে অপহরণের ঘটনা। আশপাশের লোকালয়ে চলছে ডাকাতি, চুরি সহ নানা অপকর্ম। মাদক ব্যবসায়িদের কাছেও নিরাপদ স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে রাবার বাগান। অপরাধি চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে রাবার বাগানের ২ শতাধিক শ্রমিক এবং পাশর্^বর্তী কাউয়ারখোপ ও জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। অপহরণ ঠেকাতে সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় রাবার বাগান ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বাগানে কষ আহরনে নিয়োজিত শ্রমিকরাও অপহরণের শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে। আতংকিত শ্রমিকরা বাগানে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। যথাসময়ে শ্রমিকরা বাগানে রাবারের কষ সংগ্রহ করতে পারছেন না। এ কারনে রাবার উদপাদনে ধ্বস নামার আশংকা করা হচ্ছে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, রাবার বাগানের পাহাড়ে দুষ্কৃতিকারিরা নিরীহ, হতদরিদ্র লোকজনকে তুলে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের মতো ঘৃণ্য কর্মকান্ড চালায়। তিনি এসব অপকর্মে জড়িতদের হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ সজাগ হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতে দুষ্কৃতিকারিদের নির্মুলে আরো বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমাও রাবার বাগানে গিয়ে অপহরণকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানান, বাগানের অপহরণকারি চক্রের উৎপাতত চরম আকার ধারন করেছে। প্রতিদিনই অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত হয়েছে। অপহরণকারি চক্রের কারণেই আতংকে টেপাররা (শ্রমিক) যথাসময়ে বাগানে রাবার কষ সংগ্রহে যেতে পারছে। একারনে কষ সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি কষ সংগ্রহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানও আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বে। তিনি আরো জানান, রাবার বাগানে অপহরণসহ সকল অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসন ও বাগানের আনসার সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাগানের পাশর্^বর্তী কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিব উল্লাহ জানান, রাবার বাগান এখন অপরাধিদের আস্তানায় পরিনত হয়েছে। প্রতিদিনই অপহরণের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় জনসাধারণ এবং বাগানে কর্মরত টেপাররা (শ্রমিক) বেশী অপহরণের শিকার হচ্ছে। এলাকার প্রবাস ফেরত ব্যক্তিরাও অপহরণ-ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে এবং মুক্তিপণ নিয়ে অপহৃতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ এবং বাগানের আনসার সদস্যদের পাশাপাশি এখন গ্রামবাসীও অপরাধিদের দমনে স্বোচ্ছার হয়েছে।
বাগানের টেপার (শ্রমিক) দিদারুল আলম, ছৈয়দ হোছন, পাহারাদার রাশেল জানান, তারাও কয়েকদিন আগে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। তবে তারা কৌশলের অপহরণকারি চক্রের কবল থেকে ফিরে আসেন। পাহারাদার রাশেল জানান, তাকে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলো অপহরণকারিরা। এছাড়া সম্প্রতি অপহরণকারিদের হামলায় আহত টেপার সোহেল।
এদিকে রাবার বাগানে কষ সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বদরুদ্দোজা রাবার প্লান্টার্স এন্ড লেবার সাপ্লাইয়ার্স এর স্বত্ত্বাধিকারি শহিদুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাগানে অপহরণকারিদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা যথাসময়ে রাবারের কষ সংগ্রহ করতে পারছে না। এমনিক প্রায় সময় আনসার সদস্যদের পাহারায় শ্রমিকরা কষ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাগানে রাবার উৎপাদনে ধ্বস নামবে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় এর মুঠোফোনে সোমবার রাতে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: