ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রামুর জাহাজ ভাসা উৎসবে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

সোয়েব সাramu-pic-jahaj-basha-2-17-10-16ঈদ, রামু :::
কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহি কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর থেকে এ জাহাজ ভাসাকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠে বাঁকখালী নদীর দুই তীর। বাঁশ-বেত ও রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি ৬টি কল্প জাহাজে চলে তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নাচ-গানের পাশাপাশি এসব জাহাজে চলে বৌদ্ধ কীর্তনও।
বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উৎসবের আয়োজন করেছেন রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদ।
উৎসবে রামু উপজেলার ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীতে নির্মিত ৬টি কল্প জাহাজ অংশ নেয়। বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরী জাহাজে স¤্রাট অশোকের প্রতিকৃতি, ঈগল, ময়ূর, ঘোড়া, চূড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছয়-সাতটি নৌকায় এক করে সেই নৌকার ভেলায় বসানো হয় এক একটি জাহাজ। এসব জাহাজেই চলে শিশু-কিশোর ও যুবকদের বাঁধভাঙা আনন্দ। তাঁরা নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে মেতে ওঠবে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে।
জাহাজ ভাসা উৎসব উপলক্ষে বাঁকখালী নদীর তীরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ও সৌগত সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় থের।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম। তিনি বলেন, রামুর শত বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য আয়োজন জাহাজ ভাসা উৎসব। এ উৎসব রাখাইনদের হলেও সব মানুষের উপস্থিতি এ আয়োজন প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। এ আয়োজন আরো বৃহৎ পরিসরে করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. শাহজাহান আলীম, রামু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ নিকারুজ্জামান, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, কক্সবাজার জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি প্রবীর বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক তরুন বড়ুয়া,ও রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া ।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সমন্বয়কারি অর্পন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বড়ুয়া।
জানা গেছে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সূত্র পাঠ শেষে দুপুর দুইটার দিকে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে চলে আনন্দায়োজন। প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসানো উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ তিনমাস ব্যাপী রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে আনন্দায়োজনের পর মহাউৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে এ উৎসব সম্পন্ন করা হলো।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সমন্বয়কারি অর্পন বড়ুয়া জানান, এ বছর রামু উপজেলার মধ্যম মেরংলোয়া, পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইন পাড়া, হাইটুপী বড়ুয়া পাড়া ও হাজারীকুল গ্রাম থেকে মোট ছয়টি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু জানান, উপজেলার সকল বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবারণা পূর্ণিমার শুভ সূচনা হয়। পূর্ণিমার দিন বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা অষ্টশীল পালন করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বাকঁখালী নদীতে ভাসানো হলো কল্প-জাহাজ।

পাঠকের মতামত: