ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

রামু পিআইও অফিসে কোটি টাকা লোপাট!

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

‘লাভের পুরো টাকাটাই গেছে পিঁপড়ার পেটে’-এমন ঘটনা ঘটেছে রামু উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে (পিআইও)। উপজেলার গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ করা কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচি (কাবিটা) এবং টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের ‘জুন ফাইন্যালের’ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এরশাদ নামে একজন উমেদার। ঘটনাটি সবাই স্বীকার করলেও টাকার অংক নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

টাকার এ অংক কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। উপজেলা অফিস থেকে সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের হিসাব দেখানো হয়েছে, গেল জুনের ৩০ তারিখের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করা হয়েছে। বাস্তবে প্রকল্পগুলোর মধ্যে অনেকটাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ছোঁয়াও লাগেনি বলে অভিযোগ ওঠেছে। এমনকি কোনো কাজ না হলেও প্রকল্পের কাজ যথারীতি সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। সেই সাথে প্রকল্পের বিপরীতে প্রকল্প কমিটিকে টাকাও দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের টাকা জুন ফাইন্যালে হিসাব-নিকাশ করে সবাই ভাগ-বাটোয়ারা করার কথা। এ জন্য রামু উপজেলার বিদায়ী প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) জুন ফাইন্যালের সরকারি তহবিলের টাকা উত্তোলন করে জমা রাখার দায়িত্ব দেন ‘বিশ্বস্ত ওমেদার’ হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ এরশাদকে। এরশাদ রামু সদরের মেরুংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা। অথচ এই বিশ্বস্ত এরশাদ রামু উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বরাদ্দ করা উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে রামু উপজেলার কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লুত্ফুর রহমান বলেন, ‘রামু পিআইও অফিসের এরশাদ বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে অফিসে আসছেন না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের পুরো হিসাবটা জানা নেই।’ অপরদিকে রামুর পিআইও হিসেবে এতদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন চকরিয়া নিয়োজিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জুবায়ের আহমদ । তিনি বর্তমানে চকরিয়া উপজেলা পিআইও। তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলতে অস্বীকৃতি জানান।

রামুর কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংষ্কারের প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ দেওয়া টাকা জুন ফাইন্যালের পর তাঁরা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এবারের কোনো টাকা তাঁরা পাননি।

একজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিনি তাঁর ইউনিয়নের ৬টি প্রকল্পে নিজের টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে পিআইও অফিসের কোনো টাকা পাননি।

তাঁরা স্বীকার করেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হোক বা না হোক জুন ফাইন্যালে সরকারি বরাদ্দের হিসাব আগে দিয়ে দিতে হয়। বাস্তবে বেশির ভাগ প্রকল্পেরই কাজ হয়নি।

রামু উপজেলার বর্তমান পিআইও ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একমাস আগে এখানে যোগ দিয়েছি। এরশাদ এখন অফিসে আসে না। সে সবকিছু জানে। আমি আসার পর লোপাটের বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। বেশ কঠিন বিষয় এটি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগের পিআইও এবং এরশাদ ছাড়া বাস্তবে এসবের হিসাব-নিকাশ কারও জানারও কথা।’

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে গুরুত্বের সঙ্গে।’

পাঠকের মতামত: