কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসন আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার কক্সবাজারের চার সংসদীয় আসনে ভোটে অংশগ্রহণকারীরা প্রার্থীরা নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। সব জল্পনার অবসান শেষে রোববার পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ কররেন ভোটারেরা। এজন্য জেলাজুড়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই কিংবা কোনো ধরনের গোলযোগের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এবারে কক্সবাজারের চার সংসদীয় আসনে মোট প্রাথী ২৬ জন। মোট ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ জন। মোট কেন্দ্র ৫৫৬টি। প্রাথীদের মধ্যে কক্সবাজার-১ (পেকুয়া-চকরিয়া) আসনে সাতজন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে ছয়জন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ছয়জন এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে ভোট শান্তিপূণভাবে সম্পন্ন করতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে গত বুধবার থেকে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। এর মধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে নৌবাহিনী।
এদিকে শুক্রবার নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে কক্সবাজার-২ আসনে নিয়োজিত ‘মহেশখালী নৌ কন্টিনজেন্ট’ পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি স্থানীয় ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে ‘ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় মোতায়েনকৃত নৌ সদস্যদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
তিনি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নৌ সদস্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরিদর্শনকালে নৌ সদর, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
৪ আসনে ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ : কক্সবাজারের চারটি আসনের ৫৫৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯০ শতাংশই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। বিশেষ করে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনে শতভাগ কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চারটি আসনে মোট ভোটার ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ জন। ১৬ লাখ ভোটারের মধ্যে অন্তত চার লাখ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের বসবাস কক্সবাজার পৌরসভা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু ও চকরিয়া উপজেলায়।
কক্সবাজার-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন চার লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৫৮টি। এর মধ্যে পেকুয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি। যার মধ্যে ২২টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও বাকি ২২টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১৪টি। এর মধ্যে ৯৬টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ১৮টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে প্রার্থীরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (হাতঘড়ি), ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য জাফরের ছেলে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)।
এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপির অভিযোগে বাতিল করা হলে পরে সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৩৮ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১৮টি। এর মধ্যে মহেশখালীর ৮১টি ভোটকেন্দ্রের সবকটি কেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৩৭টি কেন্দ্রের সবকটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার-২ আসনে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), বিএনএমের প্রার্থী শরীফ বাদশাহ (নোঙর), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মোহাম্মদ খায়রুল আমীন (একতারা), বাংলাদেশ ন্যাশালিস্ট পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুল আলম (আম)।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ভোটার রয়েছেন চার লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৬৭টি। এর মধ্যে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি ভোটকেন্দ্র। এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল)।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৪টি। এর মধ্যে টেকনাফের ৫৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও উখিয়ার ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার-৪ আসনে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন চৌধুরী ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালি আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল)।
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : নির্বাচন উপলক্ষে পাঁচ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নির্বাচনের দিন রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস এবং ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। এছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলও তিনদিন বন্ধ থাকবে। রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস এবং ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। শনিবার রাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তবে ভোটারদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
পাঠকের মতামত: