ডেস্ক নিউজ :
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে যেমন দৌড়ঝাঁপ করছেন প্রার্থীরা, তেমনি প্রতিটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হাইকমান্ডে এখনো চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা তথ্য সংগ্রহ করে একাধিক তালিকা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই সব প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ৬০-৭০ জন প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার ২০টি আসন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবেÑ এটা মাথায় রেখেই ক্লিন ইমেজসম্পন্ন প্রার্থী দেখে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কারো কোনো সুপারিশ বা তদবির কাজে আসবে না। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য এবং তৃণমূলে প্রার্থীর অবস্থান দেখে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি। তবে যাদের অবস্থা ভালো এ রকম অনেককে বলা হয়েছে। আমাদের লিডার আভাস-ইঙ্গিত দিয়েছেন, কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। অক্টোবরে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনে নতুন মুখ আসছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পুরনো যত বাদ যাবে সেখানে নতুন আসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে চায় যারা এককভাবে নিজেদের কারিশমায় জিতে আসার মতো সক্ষমতা রাখেন। এককথায় উইনেবল প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে দলীয় প্রধানের দিকনির্দেশনা আছে। যেহেতু আগামী নির্বাচন অতীতের তুলনায় আওয়ামী লীগের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ এবং দলীয়ভাবে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে রাজধানীর আসনগুলোতে বর্তমান এমপিদের অবস্থা খুবই নড়বড়ে। কেউই আগামী নির্বাচনে জিতে আসার মতো অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এ ছাড়াও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ জোটের শরীকদের ঢাকায় কমপক্ষে ৫-৭টি আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা আছেন যাদের এলাকায় শক্ত অবস্থান না থাকায় রাজধানীতে নির্বাচন করতে আগ্রহী তাদের বিয়য়টা আমলে নিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার শেষের দিকে আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার চিন্তা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রতি ৬ মাস পর পর দলীয় প্রধান বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সম্প্রতি তৃণমূল নেতাদের নিয়ে গণভবনে বর্ধিত সভায় এবং তৃণমূল নেতাদের দেয়া চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এসব পর্যালোচনা করে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আপাতত প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০ এমপি প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে থেকে ৬০ থেকে ৭০ জনকে ইতোমধ্যে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। তবে গ্রিন সিগন্যাল দিলেই চূড়ান্ত নাও হতে পারে। আবার নির্বাচনী সমীকরণ না মিললে প্রার্থীর তালিকা রদবদলও হতে পারে।
জানা গেছে, এখনো জোটের সাথে নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো আলাপ আলোচনা হয়নি। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যের অবস্থানও স্পষ্ট হয়নি। জাতীয় ঐক্যের নেতারা কি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, নাকি বিএনপির সাথে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন এটা স্পষ্ট হওয়ার পরই চূড়ান্ত মনোনয়নের কাজ শুরু হবে। ফলে আপাতত সারা দেশে আগামী নির্বাচনে যেকোনো পরিস্থতিতে জিতে আসার মতো সক্ষমতা রাখেন, বেছে বেছে কেবল এমন প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আনুষ্ঠানিকভাবে এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই চূড়ান্ত প্রার্থী এটা বলা যাচ্ছে না।
তবে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, সিলেট-১ আবুল মাল আব্দুল মুহিত, গোপালগঞ্জ-১ লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান, গোপালগঞ্জ-২ শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফরিদপুর-২ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কুমিল্লা-৫ আব্দুল মতিন খসরু, ফরিদপুর-৩ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ফরিদপুর-৪ কাজী জাফর উল্লাহ, সিলেট-৬ নুরুল ইসলাম নাহিদ, টাঙ্গাইল-১ ড. আব্দুর রাজ্জাক, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম-১ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুবউল আলম হানিফ, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, চাঁদপুর-৩ ডা: দীপু মনি, ফরিদপুর-১ মো: আব্দুর রহমান, চট্টগ্রাম-৭ ড. হাছান মাহমুদ, মাদারীপুর-২ শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঠাকুরগাঁও-১ রমেশ চন্দ্র সেন, পঞ্চগড়-২ নুরুল ইসলাম সুজন, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৪ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নীলফামারী-২ আসাদুজ্জামান নূর, রংপুর-৪ টিপু মুন্সী, রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান, রংপুর-৬ ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-৫ ফজলে রাব্বী মিয়া, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-৬ মো: শাহরিয়ার আলম, নাটোর-৩ জুনায়েদ আহমেদ পলক, সিরাজগঞ্জ-১ মোহাম্মদ নাসিম, সিরাজগঞ্জ-২ হাবিবে মিল্লাত, যশোর-১ আফিল উদ্দিন, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-২ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, খুলনা-৩ বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৪ আব্দুস সালাম মুর্শেদী, খুলনা-৫ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাগুরা-১ সাইফুজ্জামান শেখর, মাগুরা-২ বীরেন শিকদার, বরিশাল-১ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, পুটয়াখালী-২ আ স ম ফিরোজ, ভোলা-৩ নুরুন্নবী চৌধুরী, ভোলা-৪ আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, জামালপুর-৩ মির্জা আজম, শেরপুর-২ বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ-২ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি, গাজীপুর-১ আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি, গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ চুমকি, নারায়ণগঞ্জ-১ গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়নগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান, নেত্রকোনা-১ মোশতাক আহমেদ রুহী, লক্ষ্মীপুর-৪ ফরিদুন্নাহার লাইলী, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, শরিয়তপুর-১ বি এম মোজাম্মেল হক, শরিয়তপুর-২ এনামুল হক শামীম, শরিয়তপুর-৩ নাহিম রাজ্জাক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ এবি তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-১ সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও চট্টগ্রাম-৯ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: